প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল ও নতুন পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
Published : 30 Sep 2015, 02:27 PM
পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়ে ছয় শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে শাহবাগে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে থেকে আন্দোলনকারীদের ১০ জনকে আটক করা হয় বলে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি মো. জসিম জানিয়েছেন।
তাদের রমনা থানায় নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলনকারীদের সবাই পরীক্ষার্থী নন। তাদের কেউ শহীদ মিনারে, কেউ রাজু ভাস্কর্য আবার কেউ শাহবাগে জমায়েত হতে চেয়েছিল। তাদের মধ্যে এরকম মতবিরোধ দেখে সন্দেহ হলে কয়েকজনকে আটক করা হয়।”
আটকরা হলেন- শিক্ষার্থী তানিয়া আহমেদের বাবা আহমেদ হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী সাখাওয়াত ইসলাম ফাহাদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কর্মী সালমান সিদ্দিকী, শিক্ষার্থী তানভীর রউফ, মোস্তাফিজুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, রোম্মান বিন ওয়ালী, মোহাম্মদ আয়াত, সাব্বির আহমেদ ও মিনহাজুর রহমান।
এছাড়া আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একদল নেতাকর্মীকেও শাহবাগ থানায় ধরে নেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রীর তোলা ছবিতে থানার সীমানার ভেতরে ছাত্রফ্রন্ট নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি এবং তাদের মারধরের চিত্র দেখা গেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জনকে যোগ্য ঘোষণা করে ফল ঘোষণা করা হয় ২০ সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হলেও আদালত তা খারিজ করে।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহীদ মিনারে অবস্থানের কথা থাকলেও সেখানে পুলিশ দেখে সরে আসেন আন্দোলনকারীরা।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা টিএসসির রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হন। প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদ এবং পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে চাইলে পাবলিক লাইব্রেরির সামনের সড়কে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে না ফিরে শাহবাগের দিকে এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। টেনে-হিঁচড়ে ১০ জনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার দাবি এবং আটকদের মুক্তির স্লোগান নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগের দিকে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়।
পুলিশের ধস্তাধস্তি ও টানা-হেঁচড়ার কারণে একজনের জামা ছিঁড়ে যায়, যাকে টেনে খালি গায়েই থানার ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এছাড়া সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নারী কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের টানা-হেঁচড়া ও ধস্তাসস্তিতে কয়েকজনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়।
পরে ছাত্রফ্রন্ট একাংশের সাধারণ সম্পাদক স্নেহার্দী চক্রবর্তী রিন্টুসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
তাদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ছাত্রফ্রন্ট নেতাকর্মীদের।
ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংহতি জানাতে গিয়েছিলাম আমরা। আমাদের মোট ২০ জনকে থানায় আনা হয়েছিল। তাদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে মারধর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন আহত হয়েছেন।”
বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছাত্রফ্রন্ট নেতাকর্মীদের শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল বাতেনকে এ সময় তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেছে।
বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, “আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ঘুরে অন্যদিকে যেতে বলে। কিন্তু তারা ফিরে না গিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিলে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের পিটুনিতে আহত মোট চারজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।
এদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সমন্বয়ক খালেদ সাইফুল্লাহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন থেকে সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বৃহস্পতিবারের ‘ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি’ সফল করার আহ্বান জানান।
বুধবারের কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারী ১৬ শিক্ষার্থীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এদের মধ্যে ছয়জন আহত। তারা ঢাকা মেডিকেলে আছে।”
তিনি বলেন, “একটি যৌক্তিক দাবির পক্ষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করে যাচ্ছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে পুলিশ।”
পূর্বঘোষিত ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচির বিষয়ে পরে খালেদ সাইফুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন তারা। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
“সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে আসবে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে এবং হচ্ছে।”