‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রে নিষেধাজ্ঞা

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমা আক্তারকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’র প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2015, 08:38 AM
Updated : 24 August 2015, 01:23 PM

ওই চলচ্চিত্রের জন্য সেন্সর বোর্ডের দেওয়া সনদের কার্যকারিতাও একই সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।

এর ফলে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন বা কোনো মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে এর সম্প্রচার বা প্রচার করা যবে না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের জন্য দেওয়া সেন্সর সনদ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে আদালতের রুলে।

তথ্য সচিব, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান, এফডিসির এমডি ও চলচ্চিত্রটির প্রযোজককে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শামীম আক্তার প্রযোজিত ও নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড।

বিভিন্ন দৃশ্যের কারণে এ চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দীর্ঘদিন আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রকে সনদপত্র দেয়।

এই সিনেমায় ‘ভীতিকর চিত্র’ দেখানো হয়েছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।

সোমবার আদালতে তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও মেহেদী হাসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

আদেশের পর মেহেদী হাসান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৭৭ সালের বাংলাদেশ প্রিন্ট সেন্সরশিপ রুলস অনুসারে ভীতিকর চিত্র প্রদর্শন করা যায় না। ভীতিকর টিভি ফুটেজ দেখানো, নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ব্যবহারও ওই আইনের লঙ্ঘন। এসব যুক্তিতেই রিট আবেদনটি করা হয়।”

সত্যিকারের রানা প্লাজা (ধসের পরের ছবি)

উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষ, মিশে গেছে রানা প্লাজা

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

ধসের ১৭ দিনের মাথায় ১০ মে বিকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রেশমা আক্তারকে জীবিত উদ্ধার করা হলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

ওই বছরই রানা প্লাজা ধস ও রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন পরিচালক নজরুল ইসলাম খান।

এতে পোশাকশ্রমিক ‘রেশমা' চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী পরী মনি। তার বিপরীতে ‘টিটু’ চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা সায়মন সাদিক। 

পরী মনি ও সায়মন সাদিক

কিন্তু এর কাহিনি ও বেশ কিছু দৃশ্য পোশাক শিল্প খাতকে ‘অশান্ত করে তুলতে পারে’ বলে অভিযোগ পাওয়ার পর সেন্সর বোর্ড গত বছর সিনেমাটি আটকে দেয়।

দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ‘রানা প্লাজা’ সেন্সর বোর্ডর ছাড়পত্র পেলেও মুক্তির প্রস্তুতির মধ্যেই উচ্চ আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা এল।

নির্মাতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, “৫০টির বেশি হলে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। অনেক হল মালিক আমাকে বুকিং মানি দিয়েছেন। এখন আমি তাদের কী জবাব দেব? প্রচার বাবদেও আমার মোটা অংকের টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”

অভিনেতা সায়মন সাদিক বলেন, “রানা প্লাজা ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা। এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় ধাক্কা।”

অভিনেত্রী পরী মনি বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রযোজনা সংস্থার ক্ষতি হবে। তবে তার ক্যারিয়ারের জন্য বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ হবে বলেই তার বিশ্বাস। 

“এই সিনেমা নিয়ে দুই বছর ধরে টানাহেঁচড়া চলছে। সেটাও আমার জন্য ইতিবাচক হয়েছে,” বলেন এই অভিনেত্রী।