'রানা প্লাজা'র বিরুদ্ধে আপত্তি এসেছে বার বার

‘রানা প্লাজা’ সিনেমার প্রদর্শন ও সম্প্রচারে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ভীষণ অবাক ও হতাশ হয়েছেন সিনেমাটির পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, অভিনেত্রী পরী মনি ও অভিনেতা সায়মন সাদিক। সিনেমাটি নির্মাণ শুরুর পর থেকেই অবশ্য নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হয়ে আসছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2015, 11:56 AM
Updated : 25 August 2015, 05:14 AM

৪ সেপ্টেম্বর ৫০ টিরও বেশি হলে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সাভারে বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা সম্বলিত ভবন রানা প্লাজা ধসের ঘটনা নিয়ে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটির। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিত হয়ে পড়েছে সিনেমাটির মুক্তির সব কার্যক্রম।

বাংলাদেশ প্রিন্ট সেন্সরশিপ রুলস -১৯৭৭ অনুসারে ভীতিকর দৃশ্য প্রদর্শন করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 'ভীতিকর দৃশ্য' সংযোজনের অভিযোগে রিট আবেদনটি করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম।

সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র রেশমার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরীমনি। পরীর দাবি, সিনেমায় তেমন কোনো দৃশ্য নেই।

“আমার তো মনে হয়, ওরা ভয়ঙ্কর শব্দটির মানেই জানে না। কোথায় ভয়ঙ্কর শব্দটি প্রয়োগ করতে হয় তাই তারা জানে না। ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি বারবার নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু আমরা তো আদালতের নির্দেশে সিনেমাটির সেন্সর ছাড়পত্র নিয়ে এসেছি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা আইনি লড়াই অব্যাহত রাখব। আইনের মাধ্যমেই আমরা আবার ছাড়পত্র পাবো।”

“দুই বছর আগে সিনেমাটি নির্মাণের সময়ই আমরা নানা বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাতে কিন্তু আমারই লাভ হয়েছে। আমার সিনেমা নিয়ে, আমার চরিত্র নিয়ে মানুষ ভেবেছে। আমারই পরিচিতি বেড়েছে। যা কিছুই করুক, একদিন আমাদের সিনেমাটি সব বাধা কাটিয়ে মুক্তি পাবে। তখন দেখা যাবে বিরোধীরা কী বলে।”

তবে সিনেমার নায়ক সায়মন সাদিক বলছেন অন্য কথা। সিনেমাটি মুক্তি না পাওয়াকে ক্যারিয়ারে ‘বড় ধাক্কা’ হিসেবেই দেখছেন।

সিনেমাটির পরিচালক নজরুল ইসলামও বলছেন একই কথা।

“সিনেমাটিতে আমি প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আমি সেন্সর নীতিমালা সম্পর্কে ভালভাবেই জানি। আমি সিনেমাতে এমন কোনো দৃশ্যই রাখিনি, যা ভীতিকর। গার্মেন্টস ধসের ঘটনাকে আমি সাধারণভাবে দেখাতে চেয়েছি। আর এখানে পুলিশের নামটিও আমি সতর্কতার সঙ্গে উপস্থাপন করছি।”

নজরুল ইসলাম দাবি করছেন, এই নিষেধাজ্ঞায় সিনেমাটি ‘আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।

“সিনেমাটির মুক্তির দিনক্ষণ যখন ঠিকঠাক, তখন এমন নিষেধাজ্ঞায় আমি তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। অনেক হল মালিক সিনেমাটি তাদের হলে প্রদর্শন করবেন বলে বুকিং মানি দিয়ে গেছে। আমি তাদের কি জবাব দেবো? সিনেমাটির প্রচারণাতেও আমাদের প্রতিষ্ঠানের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে। আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।”

সিনেমাটির সেন্সর সনদ প্রদান নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা হয় সেন্সর বোর্ডের সচিব মুন্সী জালাল উদ্দিন এবং বোর্ড সদস্য মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে। তারা বলছেন, সেন্সর বোর্ডের রিভিউ ও আপিল - দুটি কমিটিই ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। তারপর সিনেমার প্রযোজক সংস্থা উচ্চ আদালত থেকে সিনেমাটির ছাড়পত্রের ব্যাপারে নির্দেশনা নিয়ে আসে। তখন সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয়।

সেন্সর বোর্ড সচিব মুন্সী জালাল উদ্দিন বলেন, “আমরা তো সিনেমাটিকে ছাড়পত্রই দিতে চাইনি। তারপর আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আমরা ১৮ বার নিরীক্ষার পর সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছি। সিনেমাটির নাম নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও আদালত জানায়, ‘ভয়ঙ্কর ও হিংসাত্মক’ দৃশ্য নিরীক্ষা করে সিনেমাটিকে সেন্সর ছাড়পত্র দিয়ে দিতে। তখন আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালক বেশকিছু দৃশ্য পুনঃসম্পাদনা করে সেন্সরে জমা দেয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেই সিনেমাকে শেষে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য ছিলাম।”

পরীমনি ও সায়মন সাদিকের ক্যারিয়ারের অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘রানা প্লাজা’। সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ার পরই ‘গার্মেন্টস শিল্পকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে’ এমন অভিযোগ ওঠে এর বিরুদ্ধে। তারপর সেন্সর বোর্ডে যাওয়ার পর রিভিউ কমিটি আপত্তি জানায়। সনদ দেওয়া যাবে না এ মর্মে সিদ্ধান্তও দেয় তারা।

তারপর সিনেমাটির নির্মাতারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হয়। পরে সিনেমাটির বিরুদ্ধে পোশাক শিল্প সংগঠনগুলো আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেন্সর বোর্ডের তৎকালীন সচিব নিজামুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, সিনেমাটি নিয়ে ‘খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আপত্তি এসেছিল।"