শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতের কর্মীদের সরাতে অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে এই মামলা।
Published : 24 Aug 2023, 07:24 PM
আট বছর বাদে বিচার শুরুর দুই বছর পর হতে যাচ্ছে রায়; আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সেই রায়ে জানা যাবে, সাইবার আদালতের মামলায় কী হবে আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং এ এম এস নাসির উদ্দিন এলানের।
১০ বছর আগে মতিঝিল থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগের এই মামলায় তারা দুজন আসামি।
আদিলুর মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’র সম্পাদক, নাসির উদ্দিন এলান পরিচালক। তারা দুজন এখন জামিনে রয়েছেন।
তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানিসহ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষের পর বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ঠিক করে দেন ঢাকার সাইবার টাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত। তিনিই এই মামলার রায় দেবেন।
এই ট্রাইব্যুনালে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর মামলার বাদী ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (বর্তমানে সিআইডির পরিদর্শক) আশরাফুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়েছিল। তখন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন আসসামছ জগলুল হোসেন।
অধিকারের আদিলুরের বিরুদ্ধে মামলায় ৮ বছর পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
দিনভর সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী আদিলুরকে মামলা দায়েরের দিন ১০ অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অধিকারের কার্যালয়েও চলে পুলিশের তল্লাশি। আদিলুর দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান। এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরদিন মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
তার আট বছর পর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার শুরু হয়।
সাক্ষ্যে পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেছিলেন, “হেফাজতে ইসলামের ওই সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ মে সকালে পুলিশসহ ১১ জন মারা যান। অথচ অধিকারের ওয়েবসাইটে একই বছরের ১০ জুন ৬১ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবদনে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার পুরনো কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়।
“এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উস্কানি এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১)(২) ধারার অপরাধের উপাদান পাওয়া যায়।”
মামলার বাদী আশরাফুল সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাকে জেরা করেছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।