আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই বিষয়টাকে আমরা প্রাধান্য দেইনি। আমরা অপরাধের তদন্তের দিকে আগাচ্ছি এবং সেভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
Published : 23 Mar 2025, 08:36 PM
জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় ছয়টি লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে জমাও দিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি এম তাজুল ইসলাম রোববার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আরও ৩৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, “একটা মামলার তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে চলে এসেছে। ঈদের পর আরো ৩৪টা মামলার তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে চলে আসবে। এই রিপোর্টগুলো চলে আসার পর আমরা পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ দাখিল করব। ফরমাল চার্জ দাখিলের মধ দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।”
আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
দুজনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান অভিযোগ দুটি দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, সাত আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা “আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।”
সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাভার-আশুলিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি, বেক্সিমকো লিমিটেডের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনতাজউদ্দিন মণ্ডল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শরীফ ব্যাপারী, কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোস্তাক আহমদ, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি সাবের আহমেদ সজীব এবং আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. নাদিম হোসেনের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
এক প্রশ্নে প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের সুযোগ আছে। তবে সিদ্ধান্তটা রাজনৈতিকভাবে সরকারকে নিতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে কোনো দলকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না সেটা রাজনৈতিকভাবে যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা সম্ভব।
“তবে এখন আমাদের প্রধান ফোকাসটা হলো গ্রাউন্ড লেভেলে যারা অপরাধ করেছে তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছি। এই বিচারের পর যদি কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিচার সরকার করতে চায় তাহলে সেগুলোর বিচার করা সম্ভব। এই বিষয়টাকে আমরা প্রাধান্য দেইনি। আমরা অপরাধের তদন্তের দিকে আগাচ্ছি এবং সেভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “সমাজের নানা মানুষের নানা কথা শুনি, বিচার কেন তাড়াতাড়ি হচ্ছে না? একটা কথা মনে রাখতে হবে এটা গণআদালতের বিচার নয়। বিচার একটা নিয়মকানুন মেনে করতে হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংঘটিত অপরাধ জটিলতম অপরাধ। এটার তদন্ত মানসম্মত উপায়ে করতে হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য বিচার করতে হয়, তাহলে তদন্তগুলো নিখুঁত করতে হয়। এজন্য যে সময় দরকার সেই সময় আমরা পাইনি।
“৫-৬ মাস সময় মানবতাবিরোধী বিরোধী অপরাধের তদন্তের জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরেও এই অসম্ভব কাজকে আমরা সম্ভব করার চেষ্টা করছি। আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত কাজ করছে। প্রসিকিউটররা দিনরাত পরিশ্রম করছে। জাতীয় প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যে কাজ ৩ মাসে হওয়ার কথা সেটা ১৫ দিনে করার চেষ্টা করছি।”
ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাজুল বলেন, “আমরা আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন। জাতির প্রত্যাশার জায়গা থেকে এই বিচার নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার সেটা করব। অবশ্যই এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেখতে পাবেন।”