এ গবেষণাপত্র আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যার মোড়ক উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে।
Published : 18 Apr 2023, 11:20 PM
পোশাক খাতের ৮০ শতাংশ কর্মী পরের মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন পাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট-আইবিএ পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
দেশের প্রধান পাঁচ শিল্পাঞ্চল ঢাকা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ১০০ কারখানার ৫০০ কর্মীর উপর এ গবেষণা চালানো হয়।
২০২২ সাল জুড়ে পরিচালিত এ গবেষণার ফল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি ‘রানা প্লাজা অভিজ্ঞতা: সামগ্রিক কল্যাণের নিশ্চয়তা এবং পোশাক শিল্পের রূপান্তর’ শিরোনামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যার মোড়ক উন্মোচনও করা হয় ওই অনুষ্ঠানে।
গবেষণার ফলে দেখা যাচ্ছে, ৯১ দশমিক ২ শতাংশ কর্মী সময় মত বোনাস পান। ৯৪ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মী কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। ৮০ শতাংশ সময় মতো বেতন পাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট এবং কর্মক্ষেত্রের সুবিধাগুলো নিয়ে ৯৫ শতাংশ কর্মীদের নিরপেক্ষ থেকে উচ্চ সন্তুষ্টি রয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশ কর্মী কর্মক্ষেত্রে কোনো আঘাতের সম্মুখীন হননি৷ ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নিরাপদবোধ করেন। গড়ে ৭৫ শতাংশ কর্মী মাতৃত্বকালীন ও অসুস্থজনিত ছুটি পান। আর কর্মস্থল থেকে ফায়ার ড্রিল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মী।
গবেষণা গ্রন্থটির দুই সম্পাদকের একজন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন বলেন, “বইটিতে পোশাক শিল্পের ইতিহাস, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময়ের কথা এবং পরবর্তীতে পোশাক শিল্পের অনবদ্য রূপান্তরকে তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণার জন্য ক্রেতা, বিদেশি ব্র্যান্ড, সাংবাদিক, শ্রমিক সংগঠন, আরএমজি কর্মী, সরকারি সংস্থা, প্রেস মিডিয়া, ঘটনার সাক্ষী, ফটোসাংবাদিক এবং ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
“আইবিএ ৩৬ জন আহতের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যাদের আহতের মাত্রা ৭০ ভাগ পর্যন্ত ছিল। এছাড়াও দুইজন নিহতের পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এদের মধ্যে ছিল ২৬ জন নারী এবং ১২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে চারজন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বলেননি। তাদের ছাড়া সবাই গড় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন গড়ে দুই লাখ চৌষট্টি হাজার টাকা।”
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশোধিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ৯০ জন নারী পোশাক কর্মী এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে বহুসংস্কৃতির বৈশ্বিক পরিবেশে উচ্চতর পড়াশোনা করছেন। তাদের বেতন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করছে।
বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানা রয়েছে উল্লেখ করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৩টি কারখানা, যার মধ্যে ৬৯টি প্লাটিনাম। আরও ৫৫০টি কারখানা লিড স্বীকৃতি পেতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বইয়ে গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, গার্মেন্টস শিল্পে একটি টেকসই ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু করা দরকার। কর্মক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রয়োজন। সামাজিক কথোপকথনের জন্য একটি সহজ পরিবেশ তৈরি করতে এবং নিরাপত্তার একটি সঠিক সংস্কৃতি তৈরি করতে আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কর্মীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য বিএলএ এবং বিধিগুলির আরও সংশোধন প্রয়োজন।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন আইবিএর সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ও প্রভাষক ফাতেমাতুজ যাহরা সাকী। গবেষণাটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন আইবিএ পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাদ আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “এই সেক্টরে আজকে পর্যন্ত যত কিছু হলো, এর মূলে একটাই কথা সহযোগিতা, সহযোগিতা, সহযোগিতা।”
বিজিএমইএর এই সাবেক সভাপতি বলেন, “শ্রমিকদের নেতাদের সহযোগিতা, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার কারণে এই সেক্টরে প্যারাডাইম শিফট হয়েছে।”
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “আগে কী ঘটেছে, সেই থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। তবে বর্তমানে এই সেক্টরটা অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা পূর্বের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এটিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাব।”