Published : 05 May 2023, 08:44 PM
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দাবি করেছেন, দুবাইয়ে তিনি 'ইন্টারপোলের হাতে' গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, “যখন ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করে, আমাকে উনারা ফোন করেন। আমাকে বলে, ‘আপনার নামে একটা ফাইল এসেছে, আপনি আসুন। আপনাকে অ্যারেস্ট করব। তো অ্যারেস্ট করার থেকে আপনার আসা সর্বোত্তম।’
“আমি দেখলাম- আমি যদি পালিয়ে বেড়াই, তাহলে আমাকে তো অ্যারেস্ট করবে। আমাকে ইন্টারপোলে নিয়ে গেল। ইন্টারপোলে রাখলো, এক মাস ৭ দিন। আমার জীবন থেকে এক মাস ৭ দিন চলে গেছে ইন্টারপোলের জেলে। ইন্টারপোলে আমি বড় বড় আসামিদের সাথে জেল খেটেছি।"
অবশ্য ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারপোল কাউকে গ্রেপ্তার করে না, তাদের কোনো কারাগারও নেই।
আরাভের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর বলেন, আরাভ বেশ কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
"আমি গ্রেপ্তারের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি, কিন্তু তার ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সবকিছুই বাংলাদেশ পুলিশ অবগত থাকার কথা। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে।"
ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটি করে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি ডেস্ক। এনসিবির এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার এআইজির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আরাভকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
"আরাভের বিষয়ে রেড নোটিশ জারি হয়েছে- এ পর্যন্তই আমাদের কাছে তথ্য আছে। নতুন কোনো তথ্য নেই।"
সাংবাদিকদের দুষলেন আরাভ
ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের ‘এই অবস্থার’ জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করে বিষোদগার করেন আরাভ খান। ‘দুর্নীতিবাজ সাংবাদিকদের’ দুর্নীতি খুঁজে বের করতে এরপর তিনি নিজেই চেষ্টা চালাবেন বলেও ঘোষণা দেন।
আরাভ বলেন, সাংবাদিকদের এই নেতিবাচক প্রচারে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়েছে। তিনি এখন খ্যাতির বিড়ম্বনায় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারেন না। তবে তার ব্যবসায়িক প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তার দোকান থেকে সব কর্মচারীরা চলে গেছে।
২২ মিনিটের লাইভের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে তিনি দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে ক্ষোভ ঝারেন।
গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে একটি গয়নার দোকান উদ্বোধন হয় ‘আরাভের’। সেটি উদ্বোধন করতে বাংলাদেশ থেকে উড়ে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, অভিনেত্রী ফারদিন দীঘি, ইউটিউবার হিরো আলমসহ বিনোদন জগতের আরও কয়েকজন। আর সেই আয়োজন ঘিরে দেশে শুরু হয় তোলপাড়।
ওই অনুষ্ঠানের আগে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, এই আরাভ আর কেউ নন, ঢাকায় পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম, যিনি ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই গেছেন।
আরও প্রকাশ পায়, এই আরাভ বা রবিউল একেক সময় একেক নামে পরিচিতি পেয়েছেন। তার বাবা ছিলেন নিম্ন আয়ের একজন মানুষ। সেই আরাভই এখন শত শত কোটি টাকার মালিক, যার অর্থের উৎস নিয়ে আছে ধোঁয়াশা।
গত ২১ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “একটি বিষয় জানা গেছে সে (আরাভ) দুবাই পুলিশের সার্ভিলেন্সে আছে।”
এর পরপর আরাভ খানের নামে রেড নোটিস জারি করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন-ইন্টারপোল। নোটিসে তার নাম লেখা হয়- রবিউল ইসলাম রবিউল, বয়স ৩৫। জন্মস্থান বাগেরহাট।
এর আগে আরাভের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছিলেন, রবিউলের জন্ম বাগেরহাটের চিতলমারিতে মামার বাড়িতে, সেখানেই তার অনেকটা বেড়ে ওঠা। এরপর তিনি ঢাকায় আসেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিসেও তার জন্মস্থান বাগেরহাট লেখা হয়েছে।
পুরনো খবর
দেশে আরাভের বিরুদ্ধে আরেক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
আরাভের বিষয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে পুলিশ: আইজিপি
রবিউল ওরফে আরাভের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস
আরাভ দুবাই পুলিশের নজরদারিতে, জানালেন রাষ্ট্রদূত
আরাভ ‘খুনের আসামি’ জেনেই দুবাই গেছেন সাকিব: ডিবি