“এটা যেহেতু প্রফেশনাল নেগলিজেন্স- এটা কত মাত্রার, এ বিষয়ে কী করণীয় তা বিএমডিসির কাছে জানতে চেয়েছি,” বলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।
Published : 24 Oct 2024, 12:16 PM
আট মাস আগে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে অ্যান্ডোস্কপি করাতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল, সেই রাহিব রেজার মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্লীলের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চার মাস আগে বিএমডিসি, বিএসএমএমইউ ও ল্যাবএইড হাসপাতালকে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বুধবার রাহিব রেজার পরিবারের আইনজীবী রাশনা ইমাম হাই কোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. স্বপ্নীলের নিবন্ধন বাতিল ও ল্যাবএইডের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার ঘটনায় তারা হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন, যাতে বেশ কিছু নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।
“আমাদের দাবি ছিল, চিকিৎসায় অবহেলা হয়েছে কি না, সেজন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা। সে আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত করেছে। প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি স্পষ্টিকরণ (ক্লারিফিকেশন) চিঠিও দিয়েছে অধিদপ্তর। তাতে ডা. স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
তিনি বলেন, এতে অধ্যাপক স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পেটে গ্যাসজনিত সমস্যা নিয়ে বিএসএমএমইউর ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল কাছে গিয়েছিলেন রাহিব রেজা। সেদিন রাহিবকে অ্যান্ডোস্কপি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
ওই দিন রাত ১১টায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রাহিবের পরীক্ষা শুরু হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাব এইডের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে রাহিবকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এরপর তার পরিবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করে, যাতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ১২ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় আদালত। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ১৫ মে তাদের প্রতিবেদন দেয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কমিটির মনে হয়েছে রাহিব রেজার মৃত্যুতে ল্যাবএইড হাসপাতালের অ্যান্ডোস্কপি সেটআপ ব্যবস্থাপনার যেমন ত্রুটি ছিল, তেমনই রোগীর প্রাক-পরীক্ষা মূল্যায়নে অধ্যাপক স্বপ্নীল ও তার দলের প্রয়োজনীয় পেশাগত দায়িত্ব ও উপযুক্ত দক্ষতার ঘাটতি ছিল।
ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২৪ জুন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিএমডিসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে চিঠি পাঠায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ওই চিঠিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়, তবে তা চার মাসেও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বিএসএমএমইউর তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বুধবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি তখন একটি অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানিয়ে পরে কল দিতে বলেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
বিএসএমএমইউর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা চিঠির কপি পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা বিএমডিসির কাছে জানতে চেয়েছে বিএসএমএমইউ।
“ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি। আমাদের কমিটির সুপরিশ হচ্ছে এটা যেহেতু প্রফেশনাল নেগলিজেন্স- এটা কত মাত্রার, এ বিষয়ে কী করণীয় তা বিএমডিসির কাছে জানতে চেয়েছি। বিএমডিসি যেহেতু ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, আজ মাত্র কমিটি হলো। আমরা অপেক্ষায় আছি তারা কী পরামর্শ দেয়।”
এ বিষয়ে জানতে ডা. স্বপ্নীলকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএস করা হলে তাতেও তিনি সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএমডিসি ছাড়া কেউ প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ করতে পারে না। এ কারণে ওই চিঠি পাওয়ার পর আমরা তাকে সতর্ক করেছি।
“কতগুলো শর্ত বেঁধে দিয়েছি ওই শর্ত মেনে তাকে প্র্যাকটিস করতে বলেছি।”