অসহযোগের প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় থানাসহ পুলিশের ২৬টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে, নিহত হয়েছেন পুলিশের ১৪ সদস্য।
Published : 05 Aug 2024, 12:54 AM
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থানা ও পুলিশের স্থাপনায় হামলা এবং সহিংসতায় প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকার পতনের একদফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯টি থানাসহ পুলিশের ২৬টি স্থপনায় হামলা হয়েছে।
এসব হামলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাটি হয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়। সেখানে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্যসহ রোববারের হামলায় বাহিনীটির ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। এক দিনেই দেশজুড়ে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ও নাশকতা এবং সরকার পতনের একদফা আন্দোলন ঘিরে দায়িত্ব পালনের সময় শুধু ডিএমপিতেই এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত ও তিনজন নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ রোববার আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হয় ঢাকার খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগ থানা। এদিন ঢাকায় ১০টি পুলিশ বক্স এবং পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রোববার সরকার পতনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় সহিংসতার মধ্যে গুলিতে আহত হয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য। ওয়ারী বিভাগের ডিসিসহ ডিএমপির মোট ১১ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ অবস্থায় নাশকতাকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও পুলিশ হত্যাকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “বাধ্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে।”
“কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেখানে আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা ঢাকাসহ সারা দেশে নজীরবিহীন অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে।”
সারা দেশে আন্দোলনের নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর বর্ণনা দিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, শাহবাগ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলামোটর, মোহাম্মদপুর, কাজলা, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
সন্ত্রাসী তৎপরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, বোমাসহ সমবেত হয়ে নিরীহ জনগণ ও পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
“তাদের নারকীয় তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেশের চিকিৎসাসেবার প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও। সন্ত্রাসীরা রাজধানীর সিএমএম আদালতেও হামলা করেছে। তাদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে তারা কেউই ছাত্র নয়, তারা সন্ত্রাসী, তারা জঙ্গি।"
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান রেখেছে হাবিবুর রহমান বলেন, “কারফিউ চলাকালীন কেউ বিনাপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না। যারা কারফিউয় ভাঙবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
রোববার দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা-সংঘর্ষে প্রাণহানি বাড়ার খবরের পর এ দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারির ঘোষণা আসে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ব্যানারে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে সোমবার দেওয়া হয়েছে। দেশের সব প্রান্ত থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
তবে সবাইকে কারফিউ আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক তারা তাদের প্রতিশ্রুত দায়িত্ব পালন করবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা
১৯ থানাসহ পুলিশের ২৬ স্থাপনায় হামলা