“সবাই মিলে একই কোম্পানির আওতায় কাউন্টারভিত্তিক স্টপেজ সিস্টেমের চেষ্টা করে যাচ্ছি, এখন এটা বন্ধ করার জন্য কিছু লোকজন চেষ্টা করছে,” বলেন উপকমিশনার আজাদ রহমান।
Published : 10 Feb 2025, 11:34 PM
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গোলাপি রঙের বাস ব্যবস্থা চালু হলেও মাত্র চার দিন পরই সেগুলোর উপস্থিতি কমে গেছে সড়কে।
বাড্ডা-রামপুরাসহ বিভিন্ন সড়কে সোমবার ওই বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। মাঝেমধ্যে দুয়েকটি বাসের দেখা পেলেও সেগুলোতে জায়গা হয়নি সবার।
শুধু কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটা যাত্রীদের নিয়ে চলার কথা বাসগুলোর। কিন্তু এই নিয়মে বাস চালাতে ‘চান না’ চালক-হেল্পাররা।
তারা বলছেন, এই ব্যবস্থায় কর্মীদের অনেকে চাকরি হারাবে, আয়ও কমবে। মালিকরাও বাস শ্রমিকদের এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
কাউন্টারভিত্তিক যাত্রী তোলার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকার সায়েদাবাদে আড়াই ঘণ্টা সড়ক আটকেও রাখেন পরিবহন শ্রমিকদের একাংশ। ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বাস নেই বাড্ডা-রামপুরা সড়কে
বাড্ডা থেকে জুরাইন পথে নিয়মিত চলাচল করেন মনসুর আলী। সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাইদা বাসে দুদিন ধরে ওঠা যাচ্ছে না। আসলে বাসই কম। বাড্ডা এলাকায় সোমবার অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি।”
ফেইসবুকের বিভিন্ন ট্রাফিক গ্রুপেও ওই পথে গোলাপি বাস না থাকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ গ্রুপে আরশেদ আহমেদ আবির নামে একজন লেখেন, “রামপুরা-বাড্ডা রুটে ভিক্টর, আকাশের (পরিবহন) টিকিট কাউন্টারগুলো কী উধাও? নর্দ্দার সামনে গতকাল (রোববার) ছিল, আজ আর দেখা যাচ্ছে না। বাসও মাত্র দুয়েকটা দেখলাম।”
ফারহান আহমেদ নামে আরেকজন গোলাপি বাস ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে লেখেন, “রাস্তায় কোনো ভিক্টর ক্লাসিক, অনাবিল, রাইদা, তুরাগ বাস নেই। সে অনুযায়ী প্ল্যান করুন।”
টিকেট সিস্টেমের কারণে গোলাপি বাস চালুর পর থেকে সেগুলোর কাউন্টারগুলোতে ভিড় হচ্ছে। তবে সেই অনুপাতে বাস না পাওয়ার কথা বলেন দিয়াবাড়ির পথে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “সকাল ৭টা থেকেই এখন উত্তরায় বাস কাউন্টারগুলোতে অনেক মানুষের ভিড় হচ্ছে। বাসই আসছে না। যাও আসে যাত্রী তোলার মত অবস্থা থাকে না। উত্তরা থেকে গাজীপুর ও বিমানবন্দর উভয় দিকে চলাচলকারী বাসগুলোতে এই অবস্থা। আগে রাইদা বাসে দিয়াবাড়ি যেতাম, এখন বাসই দেখছি না।”
বাস কম কেন, এমন প্রশ্নে রাইদা পরিবহনের একজন মালিক শোয়াইবুর রহমান বলন, “ড্রাইভার-কন্ডাক্টররা গাড়ি চালাইতে চাচ্ছে না। আগে তারা ডেইলি জমা দিয়ে গাড়ি চালাইত। মানে বাসের অবস্থা অনুযায়ী ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মালিককে জমা দিয়ে তারা দৈনিক ভিত্তিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। দিনভর চালায় যা টাকা উঠে সেখান থেকে মালিকের জমাটা বাদ দিয়ে পুরোটা তাদের। এর ফলে যাত্রী বেশি হলে রোজগার তাদের বাড়ত।
“এখন টিকেট সিস্টেম হওয়ায় টাকাটা সরাসরি কোম্পানি পাইতেছে। ফলে অনেক ড্রাইভার গাড়ির সিট ভইরা গেলে লোকও তুলতাছে না। এদিকে কাউন্টারে ভিড় বাড়তেছে। পরে আইজকা (সোমবার) গাড়িই বন্ধ কইরা দিছে। গাড়ি নাই তাই রাস্তায় কাউন্টারও বসেনি।”
বাস শ্রমিক বেলায়েত বলেন, “এতদিন একটা গাড়ি চালাতে তিনজন লাগত- ড্রাইভার, কন্ডাক্টর (ভাড়া আদায়কারী) ও হেল্পার বা চালকের সহকারী। কিন্তু কাউন্টারভিত্তিক ব্যবস্থায় বাস কোম্পানিগুলো একজন ড্রাইভার ও হেলপারকে দিয়েই বাস চালানোর পরিকল্পনা করছে।
“এতে অনেক স্টাফের চাকরি যাবে। কামাইও কমবে। এইজন্য বাসের স্টাফরা সবাই রাস্তা আটকাইছিল। মালিকরা বলছে, কারও চাকরি যাবে না, বেতনও বাড়বে।”
অন্য সড়কের কী হাল
ঢাকা থেকে গাজীপুরের পথে গোলাপি বাস চলাচল কমে গেছে। তবে অন্যপথে গোলাপি বাস চলাচল করছে বলে পরিবহন কর্মীরা বলছেন।
রইছ পরিবহনের চালক খোরশেদ আলম বলেন, “আমাগের গাড়ি সব ঠিকঠাকই চলতাছে। যারা টিকিট সিস্টেম করছে, তাগো একটু ঝামেলা হইতেছে।”
আলিফ পরিবহনের আগারগাঁও কাউন্টারের টিকিট চেকার রশীদুল বলেন, তাদের গাড়ি ঠিকঠাকই চলছে। এ ছাড়া মিরপুর-গাবতলী কেন্দ্রিক পরিবহনগুলোও আগের মতই চলাচল করছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে চালু করা হয় গোলাপি রঙের বাস। সেদিন ২১টি কোম্পানির অধীনে এসব বাসে শৃঙ্খলা আনতে চালু করা হয় ই-টিকেট।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী উত্তরার আজমপুরে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তবে চার দিন পর সেই বাস চলাচল অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরাও দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি (ট্রাফিক) বিভাগের উপকমিশনার আজাদ রহমান বলেন, “বিষয়টা হচ্ছে আমরা, বাস মালিক সমিতি, বিআরটিএ-সবাই মিলে একই কোম্পানির আওতায় কাউন্টারভিত্তিক স্টপেজ সিস্টেমের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন এটা বন্ধ করার জন্য কিছু লোকজন চেষ্টা করছে।
“তাদের কিছু দাবি আছে। এটা নিয়ে তাদের বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে। এটা আলোচনা করে সমাধান হবে।”
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, “বলাকা ও তুরাগ পরিবহনের শ্রমিকরা কাউন্টার পদ্ধতিতে বাস চালাতে অসহযোগিতা করছে। তারা বলছে, তাদের বেতন কম। কাউন্টারে চালালে এলোমেলো করতে পারে না। যেখানে-সেখানে যাত্রী তুললে টাকা বেশি পায় তারা। এ কারণে তারা কাউন্টারে চালাবে না, কাউন্টারে চালালে তাদের (বেতনের) টাকা বেশি দিতে হবে।”
খোকন বলেন, “আন্দোলনকারীরা দাবি করছে পুলিশের হাতে তারা হয়রানির শিকার হয়। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন বাতিলেরও দাবি জানায় তারা। এসব কারণে সায়েদাবাদে তারা সড়ক অবরোধ করেছিল।”
আরও পড়ুন-