“আমরা চেষ্টা করছি আমাদের মনোবল থেকে শুরু করে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য,” বলেন তিনি।
Published : 08 Oct 2024, 02:13 PM
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও বাহিনীর চেইন অব কমান্ড এখন ফিরে এসেছে বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান।
তিনি বলেছেন, “আপনারা অগাস্ট মাসের ৫-৬ তারিখে যে অবস্থাটা দেখেছেন, আজকে আপনারাই বলুন পুলিশ কী অবস্থায় আছে। একসময় পুলিশ কর্মবিরতি দিয়েছিল, পরে তারা কাজ শুরু করেছে।
“আমরা বললে তো হবে না, মনে করি আপনারাও একমত হবেন- পুলিশ অনেক ‘অ্যাকটিভ রোলে’ ফেরত এসেছে। এই পূজা অনুষ্ঠানে আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করব, এতে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।”
মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৫৩টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মণ্ডপ আছে ১৩১টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে এ সংখ্যা ১২২।
প্রতিটি মণ্ডপে ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “প্রতিটিতে ফিক্সড পুলিশ মোতায়েন থাকবে, থানা পুলিশের মাধ্যমে টহল ও চেকপোস্ট ব্যবস্থা পরিচালিত হবে।
“উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা থাকবে, আর্চওয়ে-মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।”
তিনি বলেন, “অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎব্যবস্থা সচল রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
“একইসাথে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এবং র্যাব সদস্যরা তাদের টহল কার্যক্রমসহ অন্যান্য নিরপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”
গত ২ অক্টোবর মহালয়ায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী ও ১২ অক্টোবর নবমী এবং ১৩ অক্টোবর দশমী শেষে হবে দেবী বিসর্জন।
ডিএমপি কমিশনার জানান, পূজা চলাকালে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকবে। পুরান ঢাকায় রাস্তা সরু হওয়ায় সেখানে যাতে যানজট তৈরি হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মাইনুল হাসান বলেন, “রোববার দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ। এবার ঢাকা মহানগরীতে বিসর্জনের জন্য ১৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
“বিসর্জন শোভাযাত্রার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বিসর্জন স্থানে নৌ-পুলিশের টহলের পাশাপাশি ফায়ার ব্রিগেডকে অনুরোধ করেছি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।”
যেকোনো প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “পূজার দিনগুলোতে মণ্ডপে আগত ভক্তবৃন্দের প্রতি বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি।
“সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিসর্জনের সকল কাজ সম্পাদনের জন্য সকল পূজা উদযাপন কমিটি ও ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করছি।”
পটকা ও আতশবাজি ব্যবহার না করতে এবং বিসর্জন শোভাযাত্রার সময় উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করারও অনুরোধ জানান তিনি।
এ বছর দুর্গোৎসব কোনো বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে’ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এবারের দুর্গাপূজায় আমাদের জানা মতে এমন কোনো আশঙ্কা নেই, কোনো ঝুঁকি আমরা দেখছি না।”
পলাতকদের ধরতে সহায়তার অনুরোধ
ছাত্র-জনতার উপর হামলায় জড়িত পলাতকদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অনেকে হয়তো আত্মগোপনে থেকে এদিক-সেদিক পালিয়ে গিয়েছেন। আমরা চাই, সমাজের সকল স্তরের মানুষ আমাদেরকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করবে, এ সকল পলাতক ব্যক্তিরা কোথায় আছে। আমরা চেষ্টা করছি, আপনারাও আমাদেরকে সাহায্য করুন।”
গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গোয়েন্দা তথ্য তো আপনারাই দেবেন আমাদেরকে, পুলিশ কাজ করে কমিউনিটির সাপোর্ট নিয়ে। আপনারাই আমাদের সাহায্য করুন, এ সকল ব্যক্তিরা কোথায় আছে।
“কেউ গোপন পথে বাইরে যেতে পারে, হতে পারে এরকম ঘটনা। তাই আপনারা আমাদেরকে সাাপোর্ট দিন।”
পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের প্রাণহানির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় ঘটনা ঘটেছে- যেমন যাত্রাবাড়ী থানা, উত্তরা পূর্ব থানায় পুলিশ কেস হয়েছে। আরও অন্যান্য জায়গায় হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।
“পুলিশে খুব খারাপ অবস্থা থেকে আজকের এই পর্যায়ে উঠে আসছি। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের মনোবল থেকে শুরু করে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য। এজন্য আমরা জনগণের সাপোর্ট চাই।”
ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে ডিএমপির যেসব সদস্য গা ঢাকা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদেরকে অ্যারেস্টের চেষ্টা করছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ডিবি কার্যালয়ে আর কোনো বিধি বা আইন বহির্ভূত কোনো কাজ আপনারা দেখবেন না।”