উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়েছে, দু'জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে, এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়।”
Published : 01 Oct 2024, 04:58 PM
গুজব ছড়িয়ে সোমবার আশুলিয়ায় সহিংসতা ঘটানো হয়েছে দাবি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সেখানে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের মধ্যে ঢুকে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি চালিয়েছে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে আশুলিয়ার ঘটনা নিয়ে কথা বলেন শ্রম উপদেষ্টা। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও ছিলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়েছে, দু'জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে, এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়।”
এই গুজব থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলনকারীদের মধ্যে অবস্থান নেওয়া অনুপ্রবেশকারীরা গুলিও ছুড়েছে।”
সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরাবো এলাকার মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে ওই সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় টঙ্গাবাড়ি এলাকার ম্যাংগো টেক্স লিমিটেডের সুইং অপারেটর কাউসার হোসেন খাঁন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া গুলিবিদ্ধ ও আহত হন আরো করেকজন শ্রমিক।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানায়, সকালে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছিল। সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেয়।
পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তখন উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা শুরু করলে অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়। এ সময় দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়।
শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। পরবর্তীতে শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি ছোড়ে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ জন আহত হন। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।”
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ১
উপদেষ্টা বলেন, “পুরো ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদেরকে উস্কি দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এরপরই পরিস্থিতির অবনতি হয়।”
উসকানিদাতা এবং অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
আশুলিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে। একই সাথে শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে মডারেটর হিসেবে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।”
নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত শ্রমিকদেরকেও সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবারও বাইপাইল এলাকায় বেশ কিছু শ্রমিক বেতন ভাতার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুই তিনটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে রাস্তায় নেমেছে। এসব গার্মেন্টসের মালিকরা এখন পলাতক রয়েছে।
“যেসব মালিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও শ্রমিকদের দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের ব্যাপারে কাজ করছেন না, তাদের ব্যাপারে আগেও বলেছি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান শ্রম উপদেষ্টা।