কেউ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারায় সবার মধ্যে এ নিয়ে কৌতুহল রয়েই গেল।
Published : 30 Oct 2024, 12:33 AM
মাঝরাতে মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকা হঠাৎ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাওয়ার কূল কিনারা দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হয়নি; এলাকাবাসীর কৌতুহলও যে কারণে মেটেনি।
স্থানীয়রা নিজে থেকে যেমন গন্ধযুক্ত এ ধোঁয়ার কারণ জানার চেষ্টা করেছেন, তেমনি ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও নিজেদের সোর্সে এটির উৎস বের করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
এতে করে সোমবার মধ্যরাতে চাঞ্চল্য তৈরি করা ধোঁয়ার এ ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়টি দীর্ঘ সময় পরও অন্ধকারে থেকে গেল।
শুধু মোহাম্মদপুরের বিশাল এলাকা নয়, রহস্যময় হয়ে ওঠা এই ধোঁয়ায় ঘণ্টা দেড়েক আচ্ছন্ন ছিল ধানমন্ডি ও শংকর এলাকাও।
এ বিষয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুরে অবস্থান করা যৌথবাহিনীর এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর তারাও এ নিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। তখন কেউ কেউ আমিন বাজারের ময়লা ফেলার ভাগারে বর্জ্য পোড়ানোর কারণে এমন ধোঁয়া হচ্ছে বলে তুলে ধরেন।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ বলেন, সেখানে কোনো ময়লা পোড়ানো হয় না। আগের রাতেও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আমিন বাজারের কাছেই ঢাকা মহানগর পুলিশের দারুস সালাম থানা। এ থানার ওসি রকিবুল হোসেন বলেন, তিনি আমিন বাজারের ময়লা ফেলার স্থানের কাছাকাছি গভীর রাতেও দায়িত্ব পালনে করেছেন। কিন্তু ধোঁয়া বা গন্ধ পাননি।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, তারা ঘটনার পরপরই বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যদের পাঠান। কিন্তু ধোঁয়ার কোনো সূত্র জানতে পারেননি।
“কেউ কেউ বলছে টায়ারে আগুন দিয়েছে। এটারও কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
ঘটনার রাতেই মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মাসুদ রানা তাদের কাছে প্রচুর ফোন আসার তথ্য দেন। তবে কোনোভাবেই তারা সূত্র বের করতে পারেনি।
তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও গ্যাস লিকেজ হয়েছে কিনা সেজন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে রাখে ফায়ার সার্ভিস। তবে তিতাস গ্যাসও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তাদের কাছে গ্যাস লিকেজের যেমন কোনো অভিযোগ আসেনি, তেমনি পাইপলাইনের কোথাও লিকেজ হওয়ার তথ্য নেই।
মঙ্গলবার মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার শফিকুল ইসলাম বলেন, ধোঁয়ার ঘটনা জানার পর রাতে ও দিনে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও এখন পর্যন্ত এর কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিন ফায়ার সর্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে বড় কিছু হলে তার জানা থাকার কথা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নূর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় ধোঁয়া বা গন্ধের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
“ময়লা পোড়ানোর কোনো তথ্যও আমার নলেজে নেই। ধোঁয়ার গন্ধের কোনো তথ্য আমাদের কাছে এলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
এতে করে সোমবারের প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকার ঘটনা মোহাম্মদপুর এলাকাবাসীর মত অন্যদের কাছে এখনও রহস্যই থেকে গেল।
কী ঘটেছিল
সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ মোহাম্মদপুরের একের পর এক এলাকা ধোঁয়ায় ছেয়ে যেতে থাকে। বাসার ভেতরে থাকা বাসিন্দারাও ধোঁয়ার সঙ্গে এক ধরনের কটু গন্ধ পেতে থাকেন।
বাসিন্দারা বলছিলেন, ধোঁয়ার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কারও কারও কষ্ট হচ্ছিল, বারুদের মত গন্ধ পাওয়ার কথা বলেছেন অনেকে। চোখও জ্বালাপোড়া করেছে কারও কারও।
ফেইসবুক ও সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মোহাম্মদপুর ছাড়াও রাজধানীজুড়ে আলোচনা তৈরি করে এ ঘটনা।
মোহাম্দপুরের লালমাটিয়া, কাটাসুর, রায়ের বাজার, শংকর, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, নুর জাহান রোড, জাপান গার্ডেন সিটি, বাঁশবাড়ি, বছিলা, আদাবরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে একের পর এক ফোন যায় থানায়, আর ফায়ার সার্ভিসে। পরে ধানমন্ডি ও শংকর এলাকাতেও ধোঁয়া ছেয়ে যায়।
রাতেই এ বিষয়ে কেউ ফোন করেন থানায়, কেউবা ফায়ার সার্ভিসে। আবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছেও অনেক ফোন আসে গ্যাসের লাইন ফুটোর হওয়ার বিষয়ে জানতে। তবে কোনো সংস্থাই ধোঁয়ার সূত্র জানাতে পারেনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ধোঁয়া হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অবস্থা বুঝতে ও ধোঁয়া থেকে স্বস্তি পেতে অনেকে বাসার ছাদে বা বারান্দায় যান। তবে সেখানেও স্বস্তি পাননি তারা।
ঘণ্টা দেড়েক ধরে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকা বাসিন্দারা মোহাম্মদপুরে অবস্থানরত অন্য স্বজন ও পরিচিতদের ফোন করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তবে কেউ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারায় সবার মধ্যে এ নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়। দিনের বেলাতেও যে রহস্যের কিনারা হয়নি।