ফেইসবুকে দুই যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েন চাঁদপুরের ওই তরুণী।
Published : 10 Dec 2024, 10:36 PM
‘বিয়ে আর চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচারের’ চেষ্টার সময় ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন); তার দেওয়া তথ্যে দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এপিবিএনের এএসপি রাকিব হাসান ভূঁইয়া মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার উদ্ধার পাওয়া ওই তরুণী মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানায় একটি মামলাও করেছেন।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২১ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাড়ি চাঁদপুরে। প্রায় দুই বছর আগে টিপু ও জিহাদ নামে দুইজনের সঙ্গে ফেইসবুকে তার পরিচয় হয়।
এরপর তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কথা বলা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে জিহাদ তাকে চিনা কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেন।
ওই প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু ও জিহাদ মিলে ২৬ অক্টোবর ওই তরুণীকে চাঁদপুরের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকার একটি বাড়িতে নূরু নামের আরেক ব্যক্তির কাছে তাকে নিয়ে যান তারা।
ওইদিনই ইয়াং হও নামে ৩২ বছর বয়সী একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে সেই তরুণীর ‘বিয়ের নাটক সাজায়’ নূরু। ‘ভুয়া বিয়ের’ পর তারা নিকুঞ্জের ওই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
এর মধ্যে ‘পাচারকারী চক্রের সদস্যরা’ তরুণীর নামে পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং তাকে নিকুঞ্জের ওই বাসায় আটকে রাখে।
গত সপ্তাহে ইয়াং হও চীনে চলে যান। এরপর পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্য ২৭ বছর বয়সী চীনা নাগরিক ফ্যান গোউয়ে সোমবার ভুক্তভোগী তরুণীকে জোর করে শাহ্জালাল বিমানবন্দরে নিয়ে যান।
বিমানবন্দরে ওই তরুণীর মোবাইল ফোনের সেটিংসের গিয়ে ভাষা চীনা ভাষায় রূপান্তর করে ফেরত দেন, যাতে ওই তরুণী ফোন ব্যবহার না করতে পারেন।
কিন্তু ওই তরুণী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএনের অফিসে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এপিবিএনের এএসপি রাকিব ভূঁইয়া বলেন, “ভুক্তভোগী ওই তরুণী এপিবিএন অফিসে গিয়ে বলেন, ফ্যান গোউয়ে নামে একজন চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে। তিনি এয়ারপোর্টেই অবস্থান করছেন।”
অভিযোগ পাওয়ার পর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধরের নেতৃত্বে একটি দল বিমানবন্দরের বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ থেকে ফ্যান গৌউয়েকে গ্রেপ্তার করেন।
গ্রেপ্তারের পর তাকে এবং অভিযোগকারী তরুণীকে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিকুঞ্জের ওই বাড়িতে আরো ৭ থেকে ৮ জন চীনা ব্যক্তি এবং কয়েকজন নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী তরুণী তথ্য দিয়েছেন পুলিশকে। তবে তাকে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
পরে সোমবার গভীর রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের এর একটি দল নিকুঞ্জের ওই বাড়িতে যৌথ অভিযান চালিয়ে ইয়াং জিকু (২৫) নামে আরও একজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে চক্রের বাকিরা পালিয়ে যায়।
এএসপি রাকিব বলেন, “অভিযানে পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সাথে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি শিহাব কায়সার খান বলেন, “বেশ কিছু দেশের মানবপাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করার চেষ্টা করে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।”