"দেশে শ্রমজীবী মানুষের বৈষম্য, বঞ্চনা এত কুৎসিত আকার ধারণ করেছে, এটা ভাবাও একটি সুষ্ঠু সমাজের জন্য অসম্ভব।"
Published : 31 Jan 2025, 10:39 PM
কাজের ‘ধরন’ অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করার সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে থাকবে বলে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন।
শুক্রবার রাজধানীতে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “যাদের কাজের ধরন স্থায়ী, তাদের স্থায়ী করার সুপারিশ থাকবে।
“যেমন, কিছু কাজ আছে প্রকল্পভিত্তিক, সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু সিকিউরিটির চাকরি; এ ধরনের চাকরি স্থায়ী করার সুপারিশ থাকবে।"
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'আউটসোর্সিংয়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব' শিরোনামে এই সেমিনার হয়; আয়োজক ছিল বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
রাষ্ট্রের অন্যান্য পর্যায়ে সংস্কার করার পাশাপাশি শ্রম খাতেও সংস্কার আনতে গত ১৮ নভেম্বর সৈয়দ সুলতান উদ্দিনকে প্রধান করে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
প্রতিবেদনে কী ধরনের সুপারিশ থাকতে পারে, সেই ধারণা দিতে গিয়ে সৈয়দ সুলতান বলেন, “কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজে অস্থায়ী লোক রাখা যাবে না। আর অস্থায়ী লোক প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি নিতে হবে; মধ্যস্বত্বভোগীর নামে নেওয়া যাবে না।”
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, "শ্রমজীবী মানুষের বৈষম্য, বঞ্চনা এত কুৎসিত আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে, এটা ভাবাও একটি সুষ্ঠু সমাজের জন্য অসম্ভব।"
চাকরি স্থায়ীকরণসহ বেশ কিছু দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা।
দাবি আদায়ে গত অক্টোবরে তারা রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে দাবি মেনে নিতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে রাস্তা ছাড়েন আউটসোর্সিং কর্মীরা।
সেমিনারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আউটসোর্সিং কর্মী শাহাদাত ইসলাম বলেন, আশ্বাস পাওয়া গেলেও ওই ১৫ দিন শেষ হওয়ার উপায় দেখছেন না তারা।
"এমন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছে, যেন সুইসাইড করতে বাধ্য হই। এর যদি কোনো গতি না হয়, আমিসহ অনেকে ফ্যানের সঙ্গে লটকাব।
তিনি বলেন, "পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। এজন্য যদি কিছু ঘটে, তার পুরো দায় সরকারকে নিতে হবে৷"
নির্বাচন কমিশনে কাজ করা শাহাবুদ্দিন বলেন, "আমরা সব ডেটার সুরক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। সব প্রতিষ্ঠানে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের দাবি জানাচ্ছি।"
বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদের প্রধান প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, আউটসোর্সিংয়ে দেশে ছয় লাখ শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে।
তিনি বলেন, “ঠিকাদাররা তাদের মজুরির ৫ থেকে ২০ শতাংশ কেটে রাখে। শ্রম শোষণের অন্যায্য এই প্রথার বিলোপ এখন সময়ের দাবি।"
এই খাত থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরানোর কাজটা সরকার এখনই করতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, "এই সরকার দাবি করছে যে তারা বৈষম্যবিরোধী সরকার; তাহলে তারা অন্তত একটা ক্ষেত্রে সেটা করে দেখাক। রাজনৈতিক ম্যাজিক আমরা চাই না; আমরা বাস্তবায়ন চাই।"
প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মীদের জন্য যে বাজেট, একই পরিমাণ অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি জানান অধ্যাপক আকাশ।
সংস্কার কমিশনের প্রধানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, "আপনার সরকার স্বীকার করে নিয়েছে, 'আমরা ক্ষমতায় এসেছি বৈষম্য দূর করতে'। তাহলে এসব বৈষম্য দূর করা হোক।"
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “২০১৮ সালের আইন যদি 'খুব খারাপ' হয়, তাহলে আইনটা বাতিল করা অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। বাতিল না করলে উনিও খারাপ।
“সরকারের বাড়তি খরচ করতে হবে না। যে টাকাটা ঠিকাদারকে দেওয়া হয়, সেটা শুধু তার (আউটসোর্সিং কর্মী) হাতে দেওয়া হোক। টাকা তো তুমি (সরকার) দিচ্ছই, মাঝখানে ঠিকাদার কেন?"
আরও পড়ুন