“কত রকমের যে জিনিস! খুব ভালো লাগল,” বলেন এক দর্শনার্থী।
Published : 14 Apr 2025, 12:48 PM
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সারাদেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। তার ছোঁয়া লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্ত্বর এলাকার কারুপণ্যের দোকানেও।
সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি আর হাঁকডাক চলছে। বাহারি পণ্য কাউকে কাউকে গ্রাম-বাঙলার বৈশাখের মেলার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
শিল্পীদের কেউ-কেউ রঙ তুলির আঁচড়ে নকশা ফুটিয়ে তুলছিলেন। কেউ তুলির স্পর্শে রঙ দিচ্ছিলেন। বাহারি সব পণ্যের সমাহার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাটির হাঁড়ি, কলসি, মাটির টব, সরা, টমটম, মাটির পুতুল, নানারকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র।
রয়েছে বাঁশের তৈরি রঙিন কুলা, রঙিন চালুনি, মাছ ধরার পলো, মাথাল, তালপাতার হাতপাখা, মুর্তার তৈরি হাতপাখা। দেশি বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে একতারা, দোতারা, ডুগডুগি, খোল, করতালও রয়েছে।
আরও আছে বেতের তৈরি গয়নার বাক্স, রিকশার রেপ্লিকা, চেয়ার, পাটের শিকা, পাটের ব্যাগ, কাগজের ফুল, কাগজের পাখি, চরকি, ঘুঙুর, বেলুনসহ আরও কত কি!
ঢাকার মিরপুর-১০ এলাকা থেকে এসেছেন রুম্পা-শোয়েব দম্পতি। দুজনেই বেসরকারি চাকুরে।
শোয়েব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসেছিলাম মূলত শোভাযাত্রায়। এখানে এসে কারুপণ্যের জিনিস দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।
“পাটের ব্যাগ কিনেছি। রূম্পা (স্ত্রী) একটা বেতের তৈরি গয়নার বাক্স কিনেছে। কত রকমের যে জিনিস! খুব ভালো লাগল।”
নিজের বাচ্চা আর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মকবুল হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে এ আয়োজন দেখে ছেলেবেলার গ্রামীণ মেলার কথা মনে পড়ছে। ঠিক সেরকম পণ্যগুলোই এখানে উঠেছে। তালপাতার হাতপাখা কিনলাম।”
তিন বান্ধবী রায়না, পপি, আর পাপিয়া এসেছিলেন ঘুরতে। তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
রায়না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “এখানে বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির অনেক কিছু আছে। খুবই ভালো লাগছে। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ চারপাশে।”
দোয়েল চত্বরের দোকানগুলোতে দেখা গেল বিদেশিদেরও। নেদারল্যান্ডসের একটি এনজিওর কর্মকর্তা স্টেলে ক্যালিস। তিনি লালশাড়ি পরে মাথায় ফুল গুঁজে এসেছিলেন। এই নারীকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি ভিনদেশি।
ভাঙা বাংলায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দুই বছর ধরে বাংলাদেশে থাকি। এই সর্বজনীন উৎসবটি সত্যিই দারুণ। এখানকার এই কারুপণ্যগুলোও দারুণ। এগুলো নিশ্চয় আপনাদের ঐতিহ্যের অংশ। আমি কিছু জিনিস কিনলাম।”
সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় থেকে সমতলজুড়ে বাংলাদেশ মেতে উঠেছে উৎসবে; বরাবরের মত রমনা বটমূলে ‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে নতুন বছরকে বরণ করেছে ছায়ানট।
এরপর বেলা ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এটি শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে ফের চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
ঐতিহ্যকে সঙ্গী করে ছায়ানট ও চারুকলার আয়োজনের বাইরে পুরো দেশজুড়েই ছোট-বড় আয়োজনে রয়েছে বর্ষবরণের। আছে কনসার্ট, সাধুমেলা, খনার মেলা, বৈশাখী মেলা, লোকনাট্যের আসরসহ নানা আয়োজন।