প্রস্তাবটির সার সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হলে তাতে সরকারপ্রধান অনুমোদন দেন।
Published : 17 Feb 2025, 11:29 PM
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পরদিনই পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে যাচ্ছে সরকার; এর বদলে নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করে দেওয়া হবে পাসপোর্ট।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলে পাসপোর্ট করতে আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে না।
আগের দিন ডিসি সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার এ বিষয়ক ঘোষণার পর সোমবার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের (এনআইডি) ভিত্তিতে নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়ার পদক্ষেপ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ।
এদিনই প্রস্তাবটির সার সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হলে তাতে সরকারপ্রধান অনুমোদন দেন বলে প্রেস অফিস থেকে জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে এখন প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়।
পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় এ গতি আসে মূলত বিষয়টি নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার পর।
রোববার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাকে যে জন্মসনদ দিয়েছেন, সেটা কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন দিয়ে করেননি। আমাকে এনআইডি দিয়েছেন- সেটাও কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি; নাগরিক হিসেবে পেয়েছি, এই দেশের নাগরিক।
”পাসপোর্টও এই দেশের নাগরিকের একটা পরিচয়পত্র। এখানে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না।”
সোমবার সকালে কোস্ট গার্ডের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়া আমাদের অনেক আগের চিন্তাভাবনা। এটা জনগণের একটা ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে না যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে।”
পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই করার পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের শুরু থেকে নানাভাবে আলোচনায় ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরদিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেড় পাতার সার সংক্ষেপ তার কাছে বিবেচনা এবং অনুমোদনের জন্য পাঠায়।
পাসপোর্ট পাওয়া সহজ করতে আরও যেসব পদক্ষেপ
>> পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণের লক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রদান করা যেতে পারে।
>> অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিবর্তে জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রদান করা যেতে পারে। ডেটাবেজের সঙ্গে আবেদনের তথ্য মিলে গেলে সে অনুসারে পাসপোর্ট ইস্যু করা হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রযোজ্য হবে না।
>> বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাই করা জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট দিতে হবে।
>> পাসপোর্ট পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান পাসপোর্টের সঙ্গে চাওয়া মৌলিক তথ্যের (নিজ নাম, পিতা মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান) পরিবর্তন হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।
>> পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজ বা জন্মনিবন্ধন ডেটাবেজের সঙ্গে যাচাই করা হলে তা ‘বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ, ১৯৭৩ এর ৫(২) ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে’ বলেও সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে।
পাসপোর্ট সেবাকে অন্যতম নাগরিক সেবা হিসেবে তুলে ধরে সার সংক্ষেপে বলা হয়, বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি নাগরিক বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে যান।
এছাড়া উচ্চ শিক্ষা, স্থায়ীভাবে বসবাসসহ নানা উদ্দেশ্যে নাগরিকরা বিদেশে যান। বর্তমানে দেশে ও বিদেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার আবেদন গ্রহণ এবং ২৫ থেকে ২৮ হাজার পাসপোর্ট ছাপানো হয়।
সার সংক্ষেপে বলা হয়, “বিদ্যমান ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে পাসপোর্টের জন্য ঘরে বসে আবেদন দাখিল ও অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীগণকে একটি নির্ধারিত দিনে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য এবং পরে পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়।
“অনলাইন সিস্টেমে আবেদন দাখিলের পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানোর পর ইতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আবেদনকারীর অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে থাকে বর্তমান পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে একটি সাধারণ পাসপোর্ট ১২ কর্মদিবসের মধ্যে এবং এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন।”
কিছু পুলিশ ভেরিফিকেশন যথাসময়ে না পাওয়া বা পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনাবশ্যক কাগজপত্র যাচাইয়ের কারণে প্রায়ই আবেদনকারীদের ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায় বলে এতে বলা হয়।