শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনা বারাসাত আদালতে প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি পুলিশ।
Published : 19 Aug 2024, 10:54 AM
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়াম হোসেনকে আসামি করে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদলাতে অভিযোগপত্র দিয়েছে সে দেশের পুলিশ।
আনন্দবাজার লিখেছে, শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনা বারাসাত আদালতে প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি পুলিশ।
এই হত্যায় জড়িত সন্দেহে প্রথম ব্যক্তি গ্রেপ্তারের ৮৭ দিনের মাথায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ল। সেখানে কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়াম হোসেনের নাম থাকলেও খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্ক কিছু বলা হয়নি।
এর আগে গত মে মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, আনার হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার পাশাপাশি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুনের মূল রহস্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
তবে হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আসল কারণ জানা যাবে বলে পুলিশের ধারণা ছিল।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এমপি আনার হত্যার কারণ এখনো অজানা: ডিএমপি কমিশনার
আনার হত্যা: নেপালে আটক সিয়াম কলকাতা পুলিশের হাতে
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেওয়া হয়।
ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।
এছাড়া মে মাসে যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
এমপি আনার 'হত্যা': সেই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মিলেছে টুকরো মাংস
এমপি আনার 'হত্যা': সেই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মিলেছে টুকরো মাংস
পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।
এছাড়া শাহীনের সহযোগী সিয়াম হোসেনও হত্যাকাণ্ডের পর কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। পুলিশের ভাষ্য, শাহীনের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের সিয়াম। পরে কাঠমান্ডুর পুলিশ সিয়ামকে আটক করে কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে ধরে।
এমপি আনার হত্যা: সেলেস্টিকে নিয়ে যা বললেন আত্মীয়
এছাড়া ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকের জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।
জিহাদ ও সিয়ামকে গ্রেপ্তারের পর পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি জানিয়েছিল,নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেসব এমপি আনারেই কী না সে ব্যাপারে ফরেন্সিক রিপোর্ট আসেনি।
পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি বলছে, ওই পরীক্ষার নিশ্চিত রিপোর্টের জন্য আনারের পরিবারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে আনারের পরিবারের সদস্যরা কলকাতায় যেতে পারেননি।
আরও পড়ুন: