“শুধু আমরা না, বড় বড় দোকানও ধরা। আমরা আশায় আছি, ঈদে কী হয়। যদি কয়টা ট্যাকা আয় করা যায় তখন,” বলেন ফুটপাতের বিক্রেতা সালাম।
Published : 25 Jan 2025, 08:41 AM
মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের অনুভূতি বাড়লেও, শীতের পোশাকের বাজার জমে উঠেনি।
শুক্রবার মিরপুর-১১ ও মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। ক্রেতার আনাগোনা তেমন দেখা যায়নি। কিছু দোকানে দুই-একজন ক্রেতাকে পোশাক নেড়ে-চেড়ে দাম করে চলে যেতে দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবারের শীতে তাদের বিক্রি কম হয়েছে। শীতের তীব্রতা কম, মানুষের আর্থিক অবস্থা আর রাজনৈতিক পরিবেশকে কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এবার ফুটপাতেও চড়া দামে শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে; যেটি কিনতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর অল্প দিনের মধ্যেই শীত চলে যাবে, ফলে এদিকে আর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা।
মিরপুরের নান্নু মার্কেটের ফুটপাতে দুই যুগ ধরে কাপড় বিক্রি করেন আব্দুল সালাম। এবারের মতো এত কম বিক্রি কোনো বছর হয়নি, বলছেন তিনি।
আব্দুল সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্ধেক বিক্রি করতে পারতেছি এবার, গতবারের তুলনায়। দেশে গেঞ্জাম হইছে না, মানুষের হাতে ট্যাকা নাই। আজকে শুক্রবার, আজকেও কোন ক্রেতা নাই।
“শুধু আমরা না, বড় বড় দোকানও ধরা। আমরা আশায় আছি, ঈদে কী হয়। যদি কয়টা ট্যাকা আয় করা যায় তখন।”
ফুটপাতগুলোতে সোয়েটার, মোটা টি-শার্ট, জ্যাকেট, হুডি, উলের কানটুপি, মাফলার এগুলো বিক্রি হতে দেখা যায়।
মিরপুর ১১ নম্বর এলকায় ক্রেতাশূন্য দোকানে বসেছিলেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, শীতের শুরুতে তার দোকানে মোটামুটি বিক্রি চলছিল; তবে ধীরে ধীরে তা কমে আসতে থাকে।
“এখন শীত নামলেও, দিন তো আর বেশি নাই। এ কারণে মানুষ মনে করে, কয়দিনের জন্য কিনে কী করব? কষ্ট করে বাকি দিনটা কাটায়া দিতে চায়। আর আমাদের দোকানে তো সব গবীর মানুষেরাই আসে, সব জিনিসের দামই এখন বেশি- যেটা না কিনেই পারতেছে না, সেটা কিনে।”
পাশের দোকানের বিক্রেতা ইমরান মিয়া বলেন, এই শীতটা কয়েকদিন আগে আসলে বিক্রি কিছুটা হলেও বাড়ত।
“কিছু মানুষ আসে, সামনে দিয়ে যায়, দেখে। কিন্তু কেউ কিনে না। এবার তো ওইরকম শীত ছিল না। প্রথম থেকে থাকলে, অনেক দিনের কথা চিন্তা করে মানুষ কিনতে চাইত।”
দোকানটিতে পোশাকের দরদাম করছিলেন হোসনা আক্তার। পরে তিনি কাপড় না কিনেই চলে যান।
হোসনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুটপাতের কাপড় হইলেও দাম কম কয় না। ৩০০ টাকা দাম চায়, দুই বাচ্চার লাগি নিলে ৬০০ টাকা চইল্যা যাইব। শীতের আর কয়দিন? আগের কাপড় দিয়াই টেনেটুনে হয়ে যাবে, এর লাগি যাইতেছিগা।”
মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন পারভেজ রহমান।
তিনি বলেন, “প্রথম প্রথম টুকটাক বিক্রি করতে পারছি। আর এখনতো শীতই নাই, তাই বিক্রিও নাই। ঢাকায় শীত কম পরে তো, এ কারণে মানুষ কিনতে চায় না।”
পল্লবী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানে বাচ্চার শীতের পোশাক কিনতে দাম করছিলেন আসমা আক্তার। তার কাছে পোশাকের দাম চাওয়া হয় ১৫০ টাকা । কেনার জন্য সেটির দাম তিনি ৬০ টাকা বলেন, তবে বিক্রেতা এ দামে বিক্রি করতে রাজি হননি। পরে ছেলেকে নিয়ে চলে যান আসমা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাম বেশি; এ কারণে এবার কোন শীতের কাপড় কেনা হয়নি। গত বছর এগুলা ৫০/৬০ টাকা দিয়েই কিনছি। কয়দিন পরে শীত চলে যাবে, বেশি দিন পরতে পারবে না; পরের বছর আবার ছোট হয়ে যাবে।”
দোকানটির বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, মানুষের টাকা পয়সা কম থাকার কারণে এবার শীতের পোশাকের বাজার জমে ওঠেনি।
“গত বছর বিক্রি ভালোই ছিল, এবার কম আগের থেকে। মানুষ অনেক সমস্যার মধ্যে আছে, বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাইছে, মানষের ইনকাম কম- যার কারণে বিক্রিও কম।”
পল্লবীর ঈদগাঁ মাঠের পাশে ভ্যানে পোশাক বিক্রি করেছিলেন আজগর আলী। বললেন, সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি কেবল একটি পোশাক বিক্রি করেছেন।
আজগর আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জানুয়ারি মাস তো, এর লাগি বেচাকিনি কম হইতাছে। শীতে বিক্রি খুবই সীমিত হইছে। শীত কমের কারণে কাপড় রয়ে গেছেগা। আবার মানুষের পকেটে ট্যাকা-পয়সা নাই। শীতটা পরলে তাও বেচাকিনিটা কিছু হইতো।”
জানুয়ারির মাঝামাঝিতে শীত-কুয়াশার দাপট কিছুটা কমে এলেও, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কমছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এ মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে শীতের তীব্রতা থাকবে।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার থেকে তাপমাত্রা কমে দেশে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়বে।”