নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে এদিন প্রথম বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার।
Published : 24 Jan 2024, 02:29 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনার সুরে যে বক্তব্য যুক্তরাজ্য সরকার দিয়েছে, তার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে গঠনমূলকভাবে কাজ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।
৭ জানুয়ারি ভোটের পরদিন দেওয়া যুক্তরাজ্য সরকারের বিবৃতির প্রসঙ্গ ধরে হাই কমিশনার বলেন, “নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে বিরোধিতা প্রকাশ করে ৮ জানুয়ারি একটি বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
“আমরা এসব বিষয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখব।”
নির্বাচনে ২২৩টি আসনে জিতে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একাংশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোট ‘সুষ্ঠু হয়নি’ বলে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ভোটের পরদিন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ওই বিবৃতিতে বলে, গণতন্ত্রের যেসব ‘মানদণ্ড’ রয়েছে, গত ৭ জানুয়ারির ভোট সে অনুযায়ী হয়নি।
নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য ‘সকল বিকল্প উপস্থিত ছিল না’ বলেও মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সুসম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে সব ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার কথা সেই বিবৃতিতে বলে যুক্তরাজ্য।
নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার প্রথম বৈঠকের পর নির্বাচনে নিজেদের ওই অবস্থান নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার কথা বলেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পাঠানোর একটি চিঠি তিনি হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
বৈঠকে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে সারাহ কুক বলেন, “যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে, ব্যবসা ও বিনিয়োগ জোরদারে, নিরাপত্তা অংশীদারত্ব শক্তিশালী করতে একযোগে কাজ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও রোহিঙ্গাদের কল্যাণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।”
মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও; যদিও তিনি বলছেন, মানবাধিকারের প্রেক্ষাপট একেক দেশে একেক রকম।
সারাহ কুকের বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারাতো ৮ তারিখে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে। অবশ্যই মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী একটি বিষয়। এটি যুক্তরাজ্যেও একটি বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রেও একটি বিষয়, ইউরোপেও একটি বিষয়, সেটি বাংলাদেশেও একটি বিষয়, সেটি চীনেও একটি বিষয়…।
“সব দেশের একটি বিষয়। সব দেশই মানবাধিকার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে, আমরা অবশ্যই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করব।”
হাছান মাহমুদ বলেন, বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বিনিয়োগকারী দেশ হিসাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ‘গভীরতর’ করার আলোচনা হয়েছে হাই কমিশনারের সঙ্গে।
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হওয়ার তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কমগুলোর একটি। এমনকি আমাদের উপমহাদেশের প্রেক্ষিতেওআমরা নিচের দিকে, যেটি যুক্তরাজ্যে ৩০ শতাংশের বেশি।
“আমাদের দেশে কেউ কর দিতে চায় না। কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের কম। এটাকে কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়, এ নিয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পরিবারের সদস্যদের যাওয়ার পথ সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি যেটা বলেছি, আমার পক্ষ থেকে বিশেষ করে ফ্যামিলি রিইউনিয়নের ব্যাপারে অনেক বেগ পেতে হয়।
“দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে অনেকে গেছে, তাদের স্ত্রী, কন্যা, পুত্রদের নিয়ে যেতে চায়, সেক্ষেত্রে অনেক বেগ পেতে হয়। সেগুলো যেন সহজ হয়, সে নিয়ে আলোচনা করেছি। এবং যুক্তরাজ্যে অনেকে অবৈধ আছে, সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
দণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যে পলাতক থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ফেরানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “তারেক রহমান শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি। আমাদের সরকার যে কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত আসামির শাস্তি কার্যকর করতে চায়। তারেক রহমানকেও উপযুক্ত সময়ে আমাদের সরকার শাস্তি কার্যকর করার জন্য যা যা করার সেটি করবে।”
ডেভিড ক্যামেরনের চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, একসাথে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।”