“বেনজীর আহমেদ ও তার পোষ্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে,” বলেন দুদকের ডিজি (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
Published : 14 Oct 2024, 06:46 PM
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, এই আইজিপি সরকারি চাকরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট বানিয়ে ‘জাল জালিয়াতি-প্রতারণার’ আশ্রয় নেন সাবেক এই আইজিপি। বিভাগীয় অনাপত্তিপত্র ছাড়াই পাসপোর্টের আবেদন করেন তিনি।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা দাপ্তরিক পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ’জ্ঞাত’ থেকেও বিভাগীয় অনাপত্তি সনদ ছাড়াই স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে আসামি বেনজীর আহমেদের নামে সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু করেছেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. ফজলুল হক, মুন্সী মুয়ীদ ইকরাম, টেকনিক্যাল ম্যানেজার মোছা. সাহেনা হক, পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এই মামলা বেনজীরের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে।
’’আইজিপি বেনজীর যদি বলেন পাসপোর্ট করতে হবে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে, তারা তা না করবেন। বেনজীর পালিয়ে গেছেন, এঁরা তো জেল খাটবেন,” এমনভাবে আক্তার হোসেনের কাছে প্রসঙ্গটি তোলেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে তিনি বলেন, “পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আবেদনপত্র পাওয়ার পরে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কী কী রেকর্ডপত্র পরীক্ষা, যাচাই করবেন তা নির্ধারিত রয়েছে। সেসব যাচাই প্রক্রিয়াতে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তারা সেই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেননি। এ জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি- এই অপরাধমূলক অসদাচারণের সঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জেনে-শুনে এই কাজ করেছেন।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিজি আক্তার হোসেন বলেন, “বেনজীর আহমেদ ও তার পোষ্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। অনুসন্ধান দল সেগুলো যাচাই-বাছাইসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সেগুলো শেষ হলে তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
বেনজীর দেশে নেই, তিনি কোথায় আছেন বা তাকে ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, “বেনজীর আহমেদ পলাতক আছেন বলেই মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। তার প্রকৃত অবস্থান আমাদের জানা নেই। অনুসন্ধান শেষে মামলা রজু হয়েছে এবং মামলার তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার প্রয়োজনে যা যা করা প্রয়োজন, তা গ্রহণ করবেন।”
সরকারি কর্মকর্তা হয়েও বেনজীর কেন সাধারণ পাসপোর্ট নিয়েছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’’বেনজীর আহমেদ কী উদ্দেশ্যে বা কী কারণে তার পরিচয় গোপন করেছেন, তা আমাদের জানা নেই। মামলার তদন্ত কালে তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয় উদঘাটনের চেষ্টা করবেন।”
বেনজীর বাংলাদেশের প্রথম পুলিশপ্রধান, যিনি একাধারে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট র্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এরপর আলোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা তারিখ দেওয়া হলেও দুদকে হাজির হননি বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর।