Published : 03 May 2025, 02:28 PM
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের জন্য কেউ জুলাই বিপ্লবে জীবন দেয় নাই বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “হেফাজত ইসলাম নারীবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমি এখানে ড. ইউনূস সরকারের প্রতি প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কেন অপ্রয়োজনীয় ইস্যু তৈরি করছেন? আমি বলতে চাই, নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয় নাই।
“তারা জীবন দিয়েছিল এদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার জন্য। কাজেই আপনারা সরকারে বসেছেন যাতে করে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের আগ্রাসন মুক্ত করার জন্য।”
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে এ মহাসমাবেশ আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমি মনে করি আপনাদের দায়িত্ব শুধু সে সংস্কারগুলো করা- যে সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারবে না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আমার অনুরোধ, আপনারা অপ্রয়োজনীয় ইস্যু তৈরি করবেন না। আমরা দেখেছি, আপনারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছেন- যেগুলোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
“আপনারা রাষ্ট্রের সময় এবং সম্পদ নষ্ট করছেন। সুতরাং আমার অনুরোধ- আপনারা এই সমস্ত কমিশন বাতিল করে দেন। আমাদের এই সমস্ত কমিশনের প্রয়োজন নাই।”
হেফাজতের চার দাবি হচ্ছে- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিল করা; সংবিধানে বহুত্বদের প্রস্তাব বাতিল আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা; হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডসহ সব গণহত্যার বিচার করা; ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে’ সরকারের ভূমিকা রাখা।
হেফাজত ইসলামের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর বলেন, “আপনারা নারীবাদ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন থেকে আপনারা সরে যাবেন না।
“আমাদের বৃহত্তর লড়াই ভারতের সাম্রাজ্যবাদীর বিরুদ্ধে লড়াই। আমাদের বৃহত্তর লড়াই ইসলামের জন্য আমাদের লড়াই।”
তিনি বলেন, “আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা একটু ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের আলেমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন- তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”
প্রবাসে প্রায় সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান। এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাপুত্র জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় আপিলের রায়ে খালাস পান।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “আজকে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি শাপলা ছাত্র চত্বরে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। একইসঙ্গে আমি জুলাই বিপ্লবের শহীদদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
“আমাদের মনে রাখতে হবে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে গণহত্যার পর এই প্রথম স্বাধীনভাবে কোনো প্রোগ্রাম করতে পেরেছি।"
এগারো বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে গত অগাস্টে মামলা করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমি একটা বিষয় দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি- হেফাজতের পক্ষ থেকে কেন এতদিনেও দানব ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় নাই। আপনারা কেন এখন মামলা দায়ের করেন নাই, আমি জানি না।
“আমি মনে করি, শাপলা চত্বরে যতজন নিহত হয়েছে- তাদের সকলের হয়ে গণহত্যার দায়ে হাসিনার নামে মামলা করতে হবে।”
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।
শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।