সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী সংবাদমাধ্যমে আসা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে অনুসন্ধানের আবেদন করেছেন।
Published : 27 Apr 2025, 07:41 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং একজন বর্তমান ও একজন সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিও) বিরুদ্ধে ‘শত শত কোটি টাকার’ দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অনুসন্ধানের আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী।
রোববার বিকালে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের বর্তমান পিও ডা. মাহমুদুল হাসান ও সাবেক পিও তুহিন ফারাবির (ছাত্র প্রতিনিধি) বিরুদ্ধে দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে এ অভিযোগ দেওয়া হয়।
অভিযোগকারী আইনজীবীরা হলেন- নাদিম মাহমুদ, ইয়াছিন আলফাজ ও মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি পান মোয়াজ্জেম ও তুহিন ফারাবি।
এদিন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
এর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তিন আইনজীবী অভিযোগ নিয়ে দুদকে আসেন।
অভিযোগ জমা দিয়ে আইনজীবী ইয়াছিন আলফাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শুরুর আবেদন করেছি।”
অভিযোগে বলা হয়, ''স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।''
একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক পিও তুহিন ফারাবি ও বর্তমান পিও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও বলে দাবি করেন তিনি।
এই আইনজীবী বলেন, ''এরা চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করেছেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে ঘুরে তদবির করেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসেছে।''
অভিযোগে বলা হয়, ''মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রকৌশলীদের বদলি ও নিয়োগের জন্য তদবির বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন।
”বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্যও তদবির করেছেন।”
অপরদিকে তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুলের বিরুদ্ধে চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, পরিচালক, উপপরিচালক, সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে ‘অর্থের বিনিময়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন’ বলে অভিযোগ করার কথা তুলে ধরেন ইয়াছিন আলফাজ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসান ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং দুজন মিলে স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকেও ’সুবিধা আদায়’ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান নিয়োগ এবং হজ টিমে চিকিৎসক-নার্স অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও ‘তদবিরের মাধ্যমে’ বিশেষ সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পর্কে অভিযোগে বলা হয়, "উপদেষ্টা নিয়োগের পরপরই আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাকে সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই তিনি সচিবালয় ও সরকারি দপ্তরগুলোতে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অবস্থান করে তদবির কার্যক্রম চালাতেন। তার প্রভাবের কারণে সরকারি কর্মকর্তারা তার চাহিদামত সুবিধা দিতে বাধ্য হতেন।"
আইনজীবীরা তাদের আবেদনে বলেন, “জাতির এই সংকটময় সময়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যকর ও দৃশ্যমান অনুসন্ধান শুরু করা জরুরি।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন, ডা. মাহমুদুল হাসান ও তুহিন ফারাবির বক্তব্য জানার চেষ্টা চলছে।