“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাধা তৈরি করবে”, আওয়ামী লীগ নিয়ে এক প্রশ্নে বলেন তিনি।
Published : 19 Oct 2024, 10:31 PM
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ‘খুব দ্রুতই’ সার্চ কমিটি গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ীই এই কমিটি গঠন হবে বলেও তথ্য দিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে মাহফুজ এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এদিন মোট ১০টি দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন। দলগুলো হল: গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বিজেপি, বাংলাদেশ জাসদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
সংলাপ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের বিশেষ সহকারী বলেন, “প্রধানত নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে।
“যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের ‘ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমস’ এবং ‘গণহত্যার’ বিচার নিয়ে ওনারা কথা বলেছেন এবং এক্ষেত্রে ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য শরিক যারা ছিলেন, যারা গণভবনে বসে জুলাইয়ের শেষে এবং আগস্টের শুরুতে আওয়ামী লীগের হাত শক্তিশালী করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে এই ‘গণহত্যার’ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন, সরকারি নীতি নির্ধারণে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন এবং তারা সরকারের অভিমত জানতে চেয়েছেন।”
মাহফুজ জানান, প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পোশাক খাতের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
“স্যার, একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলেছেন, খুব দ্রুতই ইলেকশন কমিশন ‘পুনর্গঠনের’ জন্য সার্চ কমিশন গঠিত হবে। বিধি অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে ছয় জন সদস্য থাকার কথা এবং যেই বিধিমালা অনুযায়ী যা যা করার দরকার করা হবে।
“এটার ভিত্তিতে ইলেকশন কমিশন ‘পুনর্গঠনের’ পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে কবে কীভাবে ইলেকশন হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে পদ্ধতিগত জিনিসগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এর সমন্তরালেই রিফর্মস কমিটিগুলো কাজ করে যাবে।”
আওয়ামী লীগ ‘নিষিদ্ধের’ আলোচনা
সংলাপে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের বিষয়েও কথা হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “ওদের নিষিদ্ধের কথা এসেছে বা ওদের রাজনীতি কীভাবে সীমাবদ্ধ করা যায় এটা নিয়ে কথা এসেছে।
“তারপরে যেই তিনটা পার্লামেন্ট হয়েছে ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে, এই তিনটা পার্লামেন্ট কীভাবে অবৈধ ঘোষণা করা যায়, সেটা সর্ম্পকেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গণপরিষদের বিষয়ে একটি দল বলেছে। গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে কথা হয়েছে।”
গত তিনটা জাতীয় নির্বাচনে সংসদের সদস্যরা ‘অবৈধভাবে’ নির্বাচিত হয়েছেন দাবি করে মাহফুজ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাধা তৈরি করবে। এই বাধাটা আসলে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটা আপনারা দেখতে পাবেন। সেটার আইনি দিক আছে, প্রশাসনিক দিক আছে। যখন নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবে তখন আসলে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”
জাতীয় পার্টি নিয়ে কী অবস্থান
জাতীয় পার্টির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “তারা কিন্তু নীরব সমর্থন দিয়ে গেছেন (আওয়ামী লীগকে) এবং ‘অবৈধ’ নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের বিষয়ে অবস্থান সরকার এখনও পর্যালোচনা করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হবে।”
রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা (জাতীয় পার্টি) যে ‘ফ্যসিবাদের’ দোসর ছিল এবং ‘গণহত্যার’ পক্ষে সম্মতি এবং মাঠে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন এবং সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এটার সম্বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলে দিয়েছে। দলগুলো থেকেও একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত হয়েছে।”
৫ অগাস্টের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “কেন, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেন তা নিয়ে সরকার তদন্ত করছে। একটা বিষয় স্পষ্ট তা হল, ৫ থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না, প্রায় এক সপ্তাহের মত পুলিশ ধর্মঘটে ছিল, ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুনছেন যে লোকটা পালাচ্ছেন, কিন্তু পুলিশ দিয়ে ধরতে হবে, সেই জায়গায় ওই সময় একটা গ্যাপ ছিল।
“কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তাদের গ্রেপ্তার করা, এখনও চেষ্টা করছি যারা যারা বাংলাদেশের আছেন তাদের গ্রেপ্তার করতে। তারা কীভাবে পালাল তা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।”
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়ে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে- এই প্রশ্নে শফিকুল বলেন, “আমরা সামগ্রিকভাবে সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি।”
সংলাপে একাধিক রাজনৈতিক দল উপদেষ্টা পরিষদের আকার বৃদ্ধি ও ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকার কী ভাবছে- এমন প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “বেশ রাজনৈতিক দলের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সবাইকে অবহিত করবেন।”