“নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ে অনেক কিছু উঠে এসেছে। আমার মনে হয়েছে ‘উই আর অন দ্য সেম পেইজ’,” বলেন তিনি।
Published : 04 Dec 2024, 10:07 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের তিন নির্বাচনে ‘অনেক অপরাধ হয়েছে’ বলে মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
এসব ’অপরাধের’ সঙ্গে জড়িতদের বিচারের বিষয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগের কমিশনগুলো তদন্ত সাপেক্ষে সেসব নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচন করতে পারত।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বুধবার নতুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ কথা বলেন বদিউল আলম। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন ও সংস্কার কমিশন ‘একই অবস্থানে’ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বদিউল আলম বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর রয়েছে। সংস্কার কমিশনও তাদের অবস্থান থেকে ‘সুচারুভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন’ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কিছু প্রস্তাব দেবে। যেগুলো কিছু তারা বাস্তবায়ন করবে। কিছু সরকার করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে।”
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে মতবিনিময়ে অনেক কিছু উঠে এসেছে। আমার মনে হয়েছে ‘উই আর অন দ্য সেম পেইজ’। আমাদের মধ্যে খুব একটা মতপার্থক্য নেই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও মিত্র দলগুলো।
২০১৪ সালের নির্বাচনে সিইসি ছিলেন কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, ২০১৮ সালে কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বদিউল আলম বলেন, “নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করা ছাড়া সবই করতে পারে। ফলাফল হওয়ার পরে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচন করতে পারত। সেটা তারা করেনি। আদালতের নির্দেশে সেটা আরও সুস্পষ্ট করা আছে। আইনের যেটা অস্পষ্টতা রয়েছে, সেটা তারা পূরণ করতে পারে।”
গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দেড় মাস শূন্য থাকার পর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠিত হয় গত ২১ নভেম্বর।
বাকি চার কমিশনার হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসারপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন, কমিশনের দায়-দায়িত্ব, স্বাধীনতা, মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কার হওয়া উচিত, আদালতের কী ভূমিকা থাকবে এখানে, হলফনামা, না ভোট, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ব্যালটপেপার, ভোটার তালিকা, অনুপস্থিতি, নির্বাচনি অপরাধ নিয়ে নতুন কমিশনের সঙ্গে বুধবারের সভায় আলোচনা হয়েছে।
রাষ্ট্রের অন্যান্য বিষয়ে সংস্কারের মত নির্বাচন ব্যবস্থায়ও সংস্কার আনতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ অক্টোবর 'নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন' গঠন করে। ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে আট সদস্যের এই কমিশনের।
এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত মতামত নিয়েছে কমিশন। তবে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “আমরা কতগুলো বিষয় চিহ্নিত করেছি, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করছি। সময়ের মধ্যেই সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করব, সরকারের কাছে দেব।
“উনাদের (নির্বাচন কমিশন) মতামত চেয়েছি। উনারা কিছু শেয়ার করতে চাইলে করতে পারেন।”
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সংস্কার কমিশন ‘একই অবস্থানে’ দাঁড়িয়ে আছে।
“প্রেক্ষাপট আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। আমাদের বড় ঘাটতি যে জায়গাগুলোতে রয়েছে সেটা সকলেই জানি। এই বিষয়গুলোই আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের প্রথম ও একমাত্র মিটিং নয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু তথ্য আদান প্রদান করব।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপরে যে ‘আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে’, সেটা ফেরত আনতে কাজ করবেন তারা। নির্বাচন ভালোভাবে করার বিষয়ে বুধবারের সভায় তারা আলোচনা করেছেন।
গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে সানাউল্লহ বলেন, “আমরা কোনো সময় নিয়ে আলোচনা করিনি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যখনই হোক না কেন, একটি ভালো সুষ্ঠু নির্বাচন করা।”