শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীতে মন্দির-মণ্ডপে ঢাকের তালে দেবীর কাছে এ প্রার্থনা জানান তারা।
Published : 21 Oct 2023, 12:44 PM
অশুভ শক্তির বিনাশ করে বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে দুর্গতিনাশিনী দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীতে শনিবার সকালে মন্দির-মণ্ডপে ঢাকের তালে নানা আচারে দেবীর কাছে এই প্রার্থনা জানান তারা।
মহাসপ্তমীর রীতি অনুযায়ী সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দিয়েই মূলত শুরু হয় দেবীর পূজা। এদিনের আয়োজনে রয়েছে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। এদিন মন্দির-মণ্ডপে বস্ত্র বিতরণের কর্মসূচিও রয়েছে।
আগের দিন ষষ্ঠী সন্ধ্যায় দেবীর বোধন হয়, জাগিয়ে তোলা হয় দেবীকে। পরে অধিবাস এবং দেবী পূজার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন দশভূজা দেবী।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পূজা বিষয়ক উপদেষ্টা প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়।
“পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়।”
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিত হন।
“নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে সেখানে প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।”
পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। এর ফল ‘ছত্রভঙ্গ’।
পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, “ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমন অশুভের বার্তা দিচ্ছে, তবে ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি।”
মহাসপ্তমীর সকালে মণ্ডপে আসা পুণ্যার্থিরা জানান, তারা দেবীর কাছে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কথা হয় লালবাগের শ্যামাপ্রসাদ সাহার সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবার যেহেতু দেবী এসেছেন ঘোটকে চড়ে, তার ফল তো অশুভ। আমরা প্রার্থনা করেছি, দেবী যেন আমাদের প্রতি সদয় হোন। ভক্তের প্রার্থনায় দেবী যেন শান্তি ছড়িয়ে দেন। কোনো রকম হানাহানি না হোক, অস্থিরতা না হোক। এর জন্যই প্রার্থনা করেছি।”
রমনা কালী মন্দিরে সকালে লোকজন খুব বেশি ছিল না। এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনজীবীদের সমাবেশে যোগ দেন, যে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ছিল কড়াকড়ি।
তবে মণ্ডপে আসা পুণ্যার্থিরা জানান, তাদের মণ্ডপে প্রবেশে কোনো রকম বাধা ছিল না। নিরাপত্তার জন্য সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন।
দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। রোববার মহাঅষ্টমী। আর অষ্টমী পূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। ঢাকার মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনে বড় আকারে কুমারী পূজা হয়। কুমারী পূজায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গারই আরাধনা করা হয়।
অষ্টমী ও নবমী শেষে মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।