“হেইট স্পিচ এমনি এমনি হচ্ছে না। অনেকের অনেক রকম স্বপ্ন রয়েছে এসবের পেছনে। যেগুলো আমাদের জন্য খুবই ভীতিকর,” বলেন তিনি।
Published : 10 Dec 2024, 11:56 PM
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাহিত্য ‘অসাধারণ’ এবং একই সঙ্গে ‘শক্তিশালী’ বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, “রোকেয়ার অস্তিত্বের উপস্থিতিটাই আমাদের জন্য একটা বড় শক্তির জায়গা।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে আনু মুহাম্মদ এই মন্তব্য করেন।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তার বক্তব্যে ‘হেইট স্পিচ’ নিয়ে কথা উঠায় আনু মুহাম্মদ বলেন, “হেইট স্পিচ এমনি এমনি হচ্ছে না। অনেকের অনেক রকম স্বপ্ন রয়েছে এসবের পেছনে। যেগুলো আমাদের জন্য খুবই ভীতিকর কিংবা গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার খুবই বিপরীত চিন্তা।”
ছাত্র-জানতার আন্দোলনে সক্রিয় থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, “কারো কারো এমন চিন্তা হয়েছে যে, এখন সময় বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন না করে আফগানিস্তান বানানো সম্ভব, সৌদি আরব বানানো সম্ভব আবার কেউ অন্ততপক্ষে ইরান বানানোর জন্য সক্রিয় হচ্ছেন।
“নারী তাদের জন্য একটা বড় বাধা। তাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নারী বাধা সৃষ্টি করে। যেকোনো আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানে ওই শক্তিটা প্রকাশিত হয়, যে শক্তিটা ওই ধরনের প্রকল্পগুলোকে নাকচ করে।”
‘পুরুষতন্ত্র’ সমাজে নারীদেরকে ‘ধাক্কাধাক্কির’ মাধ্যমে অপসারণ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যখন ভাবি আমাদের প্রজন্ম কিংবা যারা এখনো জন্মগ্রহণ করে নাই, তারা এমন একটা শংকার মধ্যে পড়ার কথা, তখন রোকেয়ার কথা চিন্তা করলে মনে হয়, রোকেয়ার মত চরিত্র যে সমাজে জন্মগ্রহণ করে সেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। এ ক্ষেত্রে রোকেয়া একটি শক্তি ও অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।”
“তিনি ধর্ম নিয়ে কথা বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে কথা বলেছেন, পুঁজিবাদ নিয়ে কথা বলেছেন, কর্মস্থল নিয়ে কথা বলেছেন, নারী-পুরুষ সম্পর্কে নিয়ে কথা বলেছেন। রোকেয়া সবসময়ই পুরুষকে ভিলেন না বানিয়ে বন্ধু বানাতে চেয়েছিলেন।”
আলোচনার এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সংস্কার বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, “জাতীয় রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ থাকা উচিৎ। ৩০ ভাগ নারী থাকা উচিৎ। তাদেরকে নির্বাচিত হয়ে আসা উচিৎ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “বেগম রোকেয়া অনেক অপমান সহ্য করে হলেও তার কাজটা করে গেছেন। সেজন্যে আমাদেরকেও শত অপমান সহ্য করে হলেও আমাদের কাজটা করে যেতে হবে।
“চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরেও নতুন বাংলাদেশে নারীর সাথে মজুরি নিয়ে বৈষম্য, যৌন নিপীড়ন, সম্পত্তি বন্টনে বৈষম্য ও যৌতুক- বাল্যবিবাহের মাধ্যমে নিপীড়ন করা হচ্ছে।”
এখন কারা নারীর বিরুদ্ধে আছে তদন্ত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নারীমুক্তি কেন্দ্র আয়োজিত ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নারী ও নারীমুক্তি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, নাট্যকর্মী ও শিক্ষক মহসিনা আক্তার, স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু, সংগীত শিল্পী বিথী ঘোষ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. তাসনূভা জাবীন, মিরনজিল্লা হরিজন কলোনি ভূমি রক্ষা আন্দোলনের কর্মী দীপিকা রানী।