১ হাজার ২২২ কোটি ব্যয়ে চার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন।
Published : 18 Sep 2024, 07:06 PM
আগের সরকারের ‘রাজনৈতিক কারণে’ নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সভার পর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এনইসি সম্মেলনে কক্ষে সিদ্ধান্তগুলো জানাতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফ করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
সেখানে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে একনেক সভায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না।
“অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগে একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে।”
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভার আলোচনার বিষয় তুলে ধরে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না।
“তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সাথে মেলে- এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।”
দাতা সংস্থাগুলো টাকা দিতে চাচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “ইউএসএইড বলছে, তোমরা যে প্রকল্পই আনো, আমরা টাকা দিয়ে দেব। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় যেসব সংস্থা আছে, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
“চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তাদের কোনো অসুবিধা নাই। তারপরও বলছে, তোমাদের চাহিদা বল, আমরা চেষ্টা করব।”
“কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কথা হচ্ছে ‘আস্তে’ চলা,”- বিষয়টি তুলে ধরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের হাতে এখন একদমই প্রকল্প নেই। আমরা কিছু দিন আস্তে আস্তেই চলব। আমরা আরও চার-পাঁচ মাস পর বুঝতে পারব যে, আমাদের উন্নয়ন বাজেট কত হওয়া উচিত।”
দেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বা সহায়তা আসবে না, সেগুলোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “রাজস্ব আদায়ে সব বছরেই অনিশ্চয়তা থাকেই, এই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেল। অর্থনীতির অনেক অস্থিরতা গেল, এখনও আছে।”
প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার- এমনটি তুলে ধরে এই উপদেষ্টা বলেন, “এখনকার উপদেষ্টা যারা আছেন, তারাই বলছেন- আমরাই দায়বদ্ধ হতে চাই।”
যেসব প্রকল্পের অনুমোদন হল
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এর মধ্যে ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ৭০.৬৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্পে’ ৫৮৮.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ এর জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৯.৮৪ কোটি টাকা জিওবি এবং ১০০.১৬ কোটি টাকা ইউনিসেফের অনুদান।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়, দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করার নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে দুই বছরের জন্য ১৬৩.১১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যয়ও কমানো হবে।