আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা কাজে যোগ দেবেন।
Published : 21 Jan 2025, 02:09 PM
একদিনের মধ্যে বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র ‘ভোরের কাগজে’র কার্যালয় খুলে দেওয়া এবং পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখাসহ বকেয়া পরিশোধের দাবি মানা না হলে মালিক পক্ষের অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা।
ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা কাজে যোগ দেবেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি তুলে ধরেন কাওছার হোসেন।
তিনি বলেন, "আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনো নোটিস অফিসে যদি না দেওয়া হয়, আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মালিক পক্ষের অফিস এইচআর ভবন ঘেরাও করা হবে।"
‘ভোরের কাগজ’ কর্ণফুলী গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির প্রধান কার্যালয় কাকরাইলের এইচআর ভবনে। পত্রিকার মালিক সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
রাজধানীর মালিবাগে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এক নোটিস টানিয়ে ৩৩ বছরের পুরনো এ সংবাদপত্রটির বন্ধ ঘোষণা করা হয় সোমবার।
নোটিসে বলা হয়, “ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১২ ধারা অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা ২০-০১-২০২৫ ইং তারিখ থেকে কার্যকর হবে।“
খোন্দকার কাওছার বলেন, “প্রধান কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাহী সম্পাদক এ কে সরকারের সই করা নোটিসে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের কোন ঘোষণা তারা দেখতে পাননি।
"আমারা বিশ্বাস করি ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করা হয়নি। ভোরের কাগজের প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে। অনতিবিলম্বে প্রধান কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে ভোরের কাগজের প্রকাশনা পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক।"
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গেল বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর পত্রিকাটির সম্পাদক শ্যামল দত্তকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
প্রত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক কাওছার বলেছেন, শ্যামল দত্তের কারাবাসের পর থেকে পত্রিকার মালিক সাবের হোসেন চৌধুরীর সই করা নিয়োগপত্রে এ কে সরকার ভোরের কাগজে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
"এ কে সরকার মূলত সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের আবাসিক পরিচালক। গণমাধ্যম বিষয়ে তার কোনো ধরণের অভিজ্ঞতা নেই বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তিনি আমাদের জানালেন সাবের হোসেন চৌধুরী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।"
পরে গত ৩০ নভেম্বর তিনিসহ দেশের আট বিভাগীয় প্রধান সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে এক সভায় বসা হয় বলেও জানিয়েছেন কাওছার।
“তখন অর্থ বিভাগের প্রধান আর্থিক সংকটের কথা জানানো হলে সাবের হোসেন গত ১৫ বছরের আয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেন, যার উত্তর অর্থ বিভাগ দিতে পারেনি। এরপর থেকে অফিসে কানাঘুষা শুরু হল বিরাট একটি কর্মীবাহিনীকে ছাঁটাই করা হবে। যার তালিকা তৈরি হয়েছে। আমরা তালিকা জানতে চাইলে কোন উত্তর পাইনি। বাধ্য হয়ে এইচআর ভবনে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে এ কে সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা স্বীকার করেন।
"তিনি বললেন, সাবের সাহেব পত্রিকা চালাবেন না। ডিক্লারেশন বাঁচাতে মাত্র ৫০০ কপি ছাপানো হবে। সাংবাদিক, কর্মচারিদের শ্রম আইন অনুযায়ি পাওনা পরিশোধ করে বিদায় দেওয়া হবে।"
অফিসের একটি পক্ষ এ কে সরকার ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ মালিকপক্ষের স্বাভাবিক অবস্থানকে ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে' নিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কাওছার।
তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তারা সাবের হোসেন চৌধুরীকে অবহিত করতে এ কে সরকারের মাধ্যমে তিনটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে তার পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আর নির্বাহী সম্পাদক একদিন ফোন করে তাদেরকে দাবি দাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন।
কাওছার বলেন, "তখন আমরা বলি ভোরের কাগজ অস্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেছে ঘোষণা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৯০০ টাকা কলাম ইঞ্চি হারে বিজ্ঞাপন বিলসহ নানান সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি। নিয়োগপত্র দেয়নি।"
গত ৯ জানুয়ারি থেকে কর্মী ছাঁটাই শুরু করা হলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের সব সার্ভিস বেনিফিটসহ বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং কাজ শুরুর প্রথম দিনের তারিখ দেখিয়ে নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন সংবাদকর্মীরা।
"কিন্তু আমাদের দাবি না মেনে অফিস বন্ধ করে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হল।"
১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘মুক্তচিন্তার দৈনিক’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলা দৈনিক ভোরের কাগজ। পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: