পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে পিএসসিকে স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রার্থীরা।
Published : 06 Apr 2025, 09:15 PM
জট নিরসনে ৪৪ থেকে ৪৭ পর্যন্ত চার বিসিএসের রোডম্যাপ দাবি করেছেন প্রার্থীরা। দ্রুত এই ‘রোডম্যাপ’ না দিলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তারা।
প্রার্থীরা বলছেন, ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা মে মাসের মধ্যে শেষ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হবে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ৪৬ এর লিখিত পরীক্ষার শুরু করতে হবে।
রোববার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মূল ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে পাঁচ দফা দাবি জানান প্রার্থীরা। তারা পিএসসিকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রার্থী ও প্রার্থীদের মুখপাত্র মোস্তাকিন আশিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিসিএসে জট সৃষ্টি হয়েছে। ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলছে। আর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা মে মাসে শুরু হচ্ছে বলে ঘোষণা এসেছে।
“বহু প্রার্থী এ দুই বিসিএসেই অংশ নিচ্ছেন। ফলে তাদের একদিকে ভাইভা, অন্য দিকে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এদিকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দেড় বছর আগে নেওয়া হলেও তার ফল হয়নি। আমরা এ জট নিরসনের দাবি জানিয়েছি। আমরা চাই ৪৪ থেকে ৪৭তম বিসিএসের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ।”
দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও কমিশনকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা তুলে ধরে মোস্তাকিন আশিক বলেন, “আমরা চাই এই কমিশন সফল হোক। কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি শিগগিরই আমাদের একটা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
“দ্রুত রোডম্যাপ না দিলে আমরা ফের আন্দোলন করবো। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী সমবেত হবেন।”
আরেক প্রার্থী সাফায়েত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ৪৪তম বিসিএস ব্যাচ, সেই ২০২১ সাল থেকে আটকে আছি। বর্তমান ও আগের কমিশনসহ গত প্রায় এক বছর ধরে আমাদের ভাইভা চলছে।
এছাড়া ৪৫তম লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার আগেই ৪৬তম লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যা প্রার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।”
সাফায়েত ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রার্থী।
কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপিতে প্রার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো হল-
>> ৪৪তম বিসিএসের বাকি থাকা মৌখিক পরীক্ষা-প্রার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি প্রকাশ করতে হবে। মে মাসের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে। জুন মাসের মধ্যে চুড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হবে।
>> ৪৪তম বিসিএসে ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারে পদসংখ্যা বৃদ্ধি করে মৌখিক পরীক্ষা-উত্তীর্ণ সবাইকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২৩ সালের নন-ক্যাডার বিধিমালা বাতিল করতে হবে।
>> ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ শেষে ৪৫ এর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং মৌখিক পরীক্ষা দ্রুত শুরু করতে হবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের আগে তা শেষ করতে হবে।
>> ৪৪ এর চূড়ান্ত ফল ও ৪৫ এর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ৪৬ এর লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে। এতে করে একই প্রার্থীর একাধিক বিসিএসে অংশ নেওয়ার প্রয়াজন হ্রাস পাবে যা ফল প্রকাশ প্রক্রিয়া ও সার্বিক বিষয়ের অনুকুল।
>> ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার অন্তত দুই মাস পরে ৪৭ এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে।
বর্তমানে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা এই বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এক দফায় শুরু হলেও গত ১৮ নভেম্বর তা বাতিল ঘোষণা করে পিএসসি। পরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফের পরীক্ষাটি শুরু হয়।
প্রথম দফায় মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৮ মে। মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় তা স্থগিত করা হয়।
আগে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। ‘ন্যায্যতা বজায় রাখতে প্রার্থীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে’ এ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২৩ সালের ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭৮৯ জন লিখিত পরীক্ষায় বসেন গত বছর ২৩ জানুয়ারি, যা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। পিএসসি গত নভেম্বরে জানিয়েছে, কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে শুরুর ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে কমিশন। দুই দফায় প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করার পর উত্তীর্ণ ২১ হাজার ৩৯৭ জন প্রার্থী এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি, যার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছর ৯ মে প্রিলিমিনারি প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন।
গত বছরের ২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরির্তনের পর অস্থির সময়ের কারণে ২৫ অগাস্ট তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
‘বৈষম্য দূরীকরণে’ প্রথম দফায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের সঙ্গে আরও সমসংখ্যক প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ফের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে গত ১৮ নভেম্বর ঘোষণা দেয় পিএসসি।
পরে গত ২৭ নভেম্বর আগে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৩৮ জনের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ফের প্রকাশ করেছে পিএসসি।
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি। ৩ হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে গত ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি।
গত ১০ ডিসেম্বর সকালে ১০টা থেকে অনলাইনে এ বিসিএসের আবেদনগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে পিএসসি।
পরে গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৭তম বিসিএসের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে আবেদন ফি ও মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) নম্বর কমানো হয়। এ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ফলে মোট নম্বর ১১০০ থেকে পরিবর্তন করে ১০০০ করা হয়েছে। এ বিসিএসে প্রথমবারের মতো আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এ বিসিএসের আবেদন, চলে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।