Published : 21 Aug 2024, 09:21 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের আগে পরে সহিংসতার তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)।
এ লক্ষ্য ‘বাংলাদেশ কনফ্লিক্ট ডট ওয়াচ’ (bdconflict.watch) নামে একট ওয়েবসাইটও চালু করেছে আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি, যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ ও ন্যায় বিচারের পক্ষে কাজ করে।
আইসিএসএফ এর ট্রাস্টি রায়হান রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১ জুলাই থেকে শুরু করে সহিংসতার সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“প্রথমত, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা দেব। পাশাপাশি এসব ঘটনায় বিচারের যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রেও এগুলো সহায়ক হবে।”
১৭ অগাস্ট এই উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হলেও ব্যক্তিগত পরিসরে আগে থেকে আইসিএসএফ তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে আসছে বলে জানান রায়হান রশিদ।
চারদিনের আপডেট জানিয়ে তিনি বলেন, “ওয়েবসাইট চালু হওয়ার আমরা বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছি এবং সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের আলোকে অ্যাডহক ভিত্তিতে কয়েকদিন পর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”
রায়হান রশিদ বলেন, “সহিংসতা এখনও চলমান। সেজন্য আমরা এখনই বলছি না, কতদিন এই ওয়েবসাইট চালু থাকবে। তবে, আমরা সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন নিজের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণগুলো তারা এখানে দেন।”
এই উদ্যোগকে ‘বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ’ রাখার জন্য এখানে সবপক্ষের তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ এখানে রাখার কথা তুলে ধরেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্যদাতা সবার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও নিশ্চয়তা দেন তিনি।
‘বাংলাদেশ কনফ্লিক্ট ডট ওয়াচ’ চালুর ঘোষণা দিয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইসিএসএফ বলেছে, “‘বাংলাদেশ কনফ্লিক্ট ডট ওয়াচ’ প্ল্যাটফর্মে আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত সংঘাতমূলক ঘটনার তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, এবং ডেটা আকারে সংরক্ষণ করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হল, এই তথ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সংঘাত প্রতিরোধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা।
“আপনার এলাকায় যদি কোনো সংঘাত, সহিংসতা, সামাজিক অস্থিরতা বা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে দয়া করে আমাদের সাথে সেই ঘটনাগুলোর তথ্য শেয়ার করুন। আপনি এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজের বা অন্যদের অভিজ্ঞতা জমা দিতে পারেন যা আমাদের গবেষণায় সহায়ক হবে এবং একটি সহনশীল সমাজ গঠনে অবদান রাখবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত জুলাই ২০২৪ থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত সকল সহিংস ঘটনাগুলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্রাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে এবং এ সংক্রান্ত সব ধরনের প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে আসছে।
“আইসিএসএফ-এর এই তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ উদ্যোগের আওতায় পড়ছে গত জুলাই মাস থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সকল পক্ষের দিক থেকে সকল ধরনের সহিংস ও নৈরাজ্যমূলক ঘটনাবলির দলিলবদ্ধকরণ। কারণ, আইসিএসএফ মনে করে, ভবিষ্যতের যে কোনো আনুষ্ঠানিক ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ উদ্যোগকে সহায়তা বা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার কোনো বিকল্প নেই।”
সেখানে বলা হয়, “আইসিএসএফ-এর সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ পর্যায়ে আমরা এই ডকুমেন্টেশন বা দলিলবদ্ধকরণ প্ল্যাটফর্মটির খবর বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই।
“যাতে দেশের প্রতিটি শহর, জেলা থেকে শুরু করে দূর দূরান্তের প্রান্তিক সর্বসাধারণ মানুষ নিরাপদ অবস্থান থেকে তাদের কিংবা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া সব ধরনের সহিংস ঘটনাগুলো আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে দলিলবদ্ধ/রিপোর্ট করতে পারেন।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা নিয়ে গত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে এই দলিলবদ্ধকরণ আইসিএসএফ তার কর্তব্য বলে মনে করে।
“এই উদ্যোগে আমাদের সহযোগী অংশীদার হিসেবে রয়েছে দেশ ও বিদেশের অনেকগুলো সেক্যুলার ও মানবাধিকার সংগঠন, যাদের নাম অনুকূল এবং নিরাপদ পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা হবে।”
প্রদত্ত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করার নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এটি গবেষণা ও নীতিমালা তৈরিতেও ব্যবহার করা হবে।”