“দিনের পর দিন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগ ইসকনকে তৈরি করেছে; চিন্ময় দাশ ভিনদেশি গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল,” বলেন মামুনুল হক।
Published : 29 Nov 2024, 06:23 PM
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার মাধ্যমে ‘সনাতনীদের সংগঠন ইসকন ও ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ’ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক।
‘ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে’ সকলকে ধৈর্য ধারণ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন হেফাজত অনুসারীরা। সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন মামুনুল হক।
তিনি বলেন, “হেফাজতে ইসলাম আহ্বান জানাচ্ছে, আলিফের হত্যাকাণ্ড আমাদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রক্তের হোলি খেলা। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র। কাজেই তাদের এই ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে আমরা পা দেব না।
“আমরা কোনোভাই সহিংস কোনো কর্মসূচি পালন করব না। শান্তিপূর্ণভাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলব। শান্তি হবে আমাদের হাতিয়ার, ধৈর্য হবে আমাদের সৌন্দর্য। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধারণ করব।”
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে।
ওই ঘটনার পর থেকে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলামসহ অনেকে।
‘ইসকনকে ভারত ও আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে’
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের পাশে বিক্ষোভ-সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলেছেন মামুনুল হক।
তিনি বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতে চাই, এটা স্পষ্ট যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ভিনদেশি গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল। সে তার প্রভুর দেশে গিয়ে সেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসে বাংলাদেশের ভেতরে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়েছে।
“দিনের পর দিন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগ ইসকনকে তৈরি করেছে। এই ইসকনকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ ও ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে, বাংলাদেশ তোমাদের ষড়যন্ত্রের কাছে মাথানত করবে না। আমরা রক্ত দেব, জীবন দেব, লড়াই করব, বাংলাদেশের গৌরব রক্ষা করব।”
বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে এই হেফাজত নেতা বলেন, “বিগত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিটি বিষয়ে জঘন্য হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশের জনগণকে আহত, ক্ষতবিক্ষত করেছে ভারত।
“আমরা ভারত রাষ্ট্রটির বাংলাদেশ নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলতে চাই- তোমরা বাংলাদেশ নীতি পরিবর্তন কর। নাহলে বাংলাদেশের মানুষ তোমাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য এদেশের মানুষকে নামতে হবে।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “চিন্ময় দাশকে ভালোভাবে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশবিরোধী তথ্যগুলো আপনারা উদঘাটন করুন। শেখ হাসিনা তাকে কত টাকা দিয়ে তার বাহিনীকে দেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে সে তথ্য উদঘাটন করুন। ভারত তাকে (চিন্ময়) কী মন্ত্র দিয়ে বারবার পাঠাচ্ছে সেই তথ্যগুলো উদঘাটন করে বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তির সকল তথ্য উন্মোচন করুন।”
ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের গেইটে হেফাজতের বিক্ষোভ-সমাবেশে সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আইনজীবী হত্যা এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনের সঙ্গে ইসকনের কেনো ‘সম্পৃক্ততা নেই’ বলে দাবি করেছেন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
বৃহস্পতিবার স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য ইসকন বাংলাদেশকে ‘অন্যায়ভাবে দায়ী’ করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের ইংরেজি নাম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল ইসকন। হিন্দু ধর্মগুরু অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকন মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী। বর্তমানে বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারের বেশি মন্দির ও কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুরনো খবর-