এবার ঈদগাহে ৩৫ হাজার নারী-পুরুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
Published : 11 Apr 2024, 10:14 AM
বছর ঘুরে আবারও উৎসবের বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর।
এক মাস রোজা শেষে বৃহস্পতিবার ঈদের সকালে ঢাকার জাতীয় ঈদগাহসহ সারাদেশের ঈদগাহ আর মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন লাখো মুসলমান।
বরাবরের মতো এবারও ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠত এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শামিল ছিলেন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে।
রাষ্ট্রপতি ঈদগাহে পৌঁছালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মজলুম ফিলিস্তিনিদির জন্য প্রার্থনা করা হয় মহান আল্লাহর কাছে।
ইমাম বলেন, “বিশ্বের অনেক জায়গায় আজ অশান্তি। আমরা তার চেয়ে শান্তিতে আছি। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদের সকলের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।”
নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণ এখন মজলুম। তাদের পাশে বিশ্ববাসীর দাঁড়ানো উচিত। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ মজলুমদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তার পরিবারের নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করার প্রার্থনার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয় দোয়ায়।
মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের শাহীদ হিসেবে কবুল করার প্রার্থনা করে তিনি বলেন, “যাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের আল্লাহ কবুল করুন।"
নামাজ শেষে কোলাকুলি আর করমর্দনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবাই।
এ জামাতে অংশ নিতে ভোর ৬টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা জড়ো হতে থাকেন। পায়জামা পাঞ্জাবি, টুপি পড়ে ও নানা ধরনের আতর সুগন্ধি মেখে আসেন মানুষ। শিশু-কিশোররা আসে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে এবারও প্রবেশ করতে হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। প্রধান ফটকে বসানো আর্চওয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নিরাপত্তা রক্ষায়।
ঈদগাহে ঢুকতে প্রধান ফটক থেকে মানুষের লাইন চলে যায় পল্টন মোড় পর্যন্ত। উত্তরে লাইন ঠেকে মৎস্য ভবন মোড় ও দক্ষিণে বঙ্গবাজার পর্যন্ত।
ঈদের প্রধান জামাতের জন্য মৎস্য ভবন, বঙ্গবাজার, পল্টন, জিপিও মোড় ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এ বলয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে বেরিকেড দিয়েছে পুলিশ।
এবার ঈদগাহে ৩৫ হাজার নারী-পুরুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
নারীদের জন্য মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে পর্দার আড়ালে নামাজের ব্যবস্থা ছিল। যেখানে প্রবেশে পৃথক ফটকের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
ঈদগাহ প্রাঙ্গণে ছিল অজুর ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, পুলিশ, র্যাবের কনট্রোল রুম। ফায়ার সার্ভিসের একটি দলও জাতীয় ঈদগাহের মাঠের পাশে ছিল।
জামাতের সময় বিদ্যুৎ সরবারহ নিরবচ্ছিন্ন করতে রাখা হয় জেনারেটর।
ঈদের আগের দিন বুধবার তপ্ত বাতাস ছিল রাজধানীতে। ঈদের দিনও তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। তবে ঈদের নামাজে তাপমাত্রা বাগড়া দেয়নি। গরমের তীব্রতা কম ছিল।
এদিকে প্রতিবছরের মত এবারও ঈদের দিন পাঁচটি জামাত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।
সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে এসব জামাত হয়।
এবার ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল থেকে। তিনদিন ঈদের ছুটির পরদিন শনিবারও সরকারি ছুটি আর রোববার পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় টানা পাঁচদিনের ছুটিতে দেশ।
ঈদ উপলক্ষে নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-এ প্রত্যাশা করে বলেন, “ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এখানে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, কূপমন্ডূকতার কোনো স্থান নেই। মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য ও পারস্পরিক সহাবস্থান এবং পরমতসহিষ্ণুতাসহ বিশ্বজনীন কল্যাণকে ইসলাম ধারণ করে। ইসলামের এই সুমহান বার্তা ও আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও শাশ্বত বাণী ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে-পবিত্র ঈদুল ফিতরে, বাণীতে রাষ্ট্রপতি এমন প্রত্যাশা করেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার আহ্বান জানান।
বার্তায় তিনি বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। একমাস সিয়াম সাধনার পর আবার আমাদের মধ্যে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এসেছে। ঈদ মানে আনন্দ। আসুন আমরা আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।”
“ঈদুল ফিতর আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক সীমাহীন আনন্দ, সুখ ও শান্তি। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ও নিরাপদে থাকুন। ঈদ মোবারক,” বলেন সরকার প্রধান।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।