Published : 04 May 2025, 04:09 PM
৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থী গেজেটভুক্ত করা ও প্রাক-পরিচয় যাচাই বা ভেরিফিকেশন নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে অনশন করছেন।
রোববার তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, প্রায় সাত বছর আগে তারা যে কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন সেটি শুধুমাত্র কোটা নিয়ে ছিল না, প্রাক-পরিচয় যাচাইয়ের নামে হয়রানির দাবিও ছিল।
৪৩তম বিসিএসের ২১৬৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ২২৭ জনের বিষয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ আসায় তাদের সাময়িকভাবে বাদ রেখে গত ৩০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন।
এরপর গেজেটভুক্ত হওয়ার দাবিতে তারা গত জানুয়ারি থেকে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
এর মধ্যে গত ৯ জানুয়ারি তারা জনপ্রশাসন সচিব বরাবর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেছ উর রহমান সেদিন একটি ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, পরীক্ষায় বাদ পড়া চাকরিপ্রত্যাশীদের একটা অংশকে ‘ফৌজদারি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ইতিহাস না থাকা সাপেক্ষে’ সরকার নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
“ফৌজদারি কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিল অথবা এমন কোনো হিডেন অপরাধ করেছে, যেটা সামনে আসছে- এমন ছাড়া অন্যদের নিয়োগপ্রাপ্তি শুধু একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার, তারা এটি পাবে।”
ফাইল প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ঘুরে এলে ‘দুই-তিন দিনের মধ্যে’ নতুন নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও সচিব সেদিন আশ্বাস দেন।
এই আশ্বাস না রাখায় ২৯ এপ্রিল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন ছয় চাকরিপ্রার্থী। তারা হলেন, শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া মো. ফয়সাল চোকদার, মো. মতিউর রহমান, এম এ হান্নান সরকার, দেবাশীষ ঘোষ ও সমরজিৎ চক্রবর্তী।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে বলেন ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিন দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে অনশনরত এই চাকরি প্রার্থীদের দেখতে যান এবং তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুর।
তিনি বলেন, “আমরা যখন ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, সেটি শুধুমাত্র কোটা নিয়ে ছিল না।
“আমরা কোটার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভেরিফিকেশনের নামে যে হয়রানি তা নিরসনের দাবি জানিয়েছিলাম, যা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো ভেরিফিকেশনের নামে চাকরিপ্রার্থীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম ২০২৪ সালের যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আমরা পরিবর্তন পাবো। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি।”
নুর বলেন, “৪৩তম বিসিএসের যাদের বাদ দেওয়া হল এটা তাদের সাথে বৈষম্য। এটা জুলাই আন্দোলনের চেতনার সাথে যায় না। কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধ করে থাকে, নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ করে বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়, তাহলে তাদের বাদ দেওয়া হোক। কিন্তু এটা যেটা করেছে তা হচ্ছে মন চাইল, তাই বাদ দিয়ে দিলাম।
ছাত্রলীগের বিষয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের গুণ্ডারা শিক্ষার্থীদের হলের একটা সিটের বিনিময়ে নির্যাতন করেছে। তাদের মিছিল মিটিংয়ে আসলে সিট আছে, না হলে সিট নেই। নারীদের লাঞ্ছিত করেছে। তাই, তাদের প্রতি আমাদের কোন সহানূভূতি নেই। “আপনারা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে বঞ্চিত হয়েছেন, আপনারা আজকে আল্টিমেটাম দেন, আমরা আপনাদের সাথে আছি।”
জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের যারা উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে আছেন তাদের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ প্রধান বলেন, “শিক্ষার্থীদের কিছু হলে সেখানে সবার আগে এ উপদেষ্টাদের ছুটে আসার কথা। অথচ তাদের আজ কোনো খবর নেই। আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সাথে কথা বলেছি। দরকার হলে আবার বলব।”