“পুরো প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ঢেলে সাজানো উচিত”, দুদক চেয়ারম্যান পরিবর্তন হবে কিনা- এই প্রশ্নে বলেন তিনি।
Published : 08 Oct 2024, 12:01 AM
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক সংস্কারে গঠন করা কমিশনের ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, তার কমিশনের কাজ চলবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি কার্যালয়েই।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
বৈঠক শেষে সংবাদকর্মীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে, সংস্কার কমিশনের অফিস কোথায় হবে। জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের কমিশনের সঙ্গে একমত হয়েছি। তাদের পরামর্শে এখন টিআইবির কার্যালয়েই সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
“এটা আসলে কাজের উপরে নির্ভর করবে। যদি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার প্রয়োজন তাহলে কমিশনে (দুদক) বসেই করব। আবার আমাদের এখানেও থাকতে পারে।”
ছাত্রদের মধ্যে একজন প্রতিনিধি সংস্কার কমিশনের থাকার কথা। তিনি কে হচ্ছেন- জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এখনও ঠিক হয়নি কে হবেন। সেটা যে কোনো দিন পেয়ে যাব।”
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেওয়ার কথা বলার পর গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন রাখেন মধ্যবর্তী সময়ে কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হবে কি না।
জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মাঝামাঝি কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হবে না। তবে সরকার চাইলে মাঝামাঝি সময়ে কোনো পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “কমিশনের কাজ হচ্ছে দুদক কীভাবে কার্যকর হবে, তার দিকনির্দেশনা, সুপারিশমালা ও পরামর্শ প্রদান করা।”
সংস্কারের পর রাজনৈতিক সরকার চাইলে দুদকে নিজেদের লোক বসাতে পারবেন কি না- এই প্রশ্নে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলীয় প্রভাবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তারা সেই বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করবেন।
দুদক চেয়ারম্যান পরিবর্তন হবে কিনা- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই। তবে টিআইবির পক্ষ থেকে আমি আগেও বলেছি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য দুদক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ফলে পুরো প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ঢেলে সাজানো উচিত।”
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠকে সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, আইন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন, আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত হন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (সোয়াস) অধ্যাপক মোস্তাক খান।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুদকের কমিশনার ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুদকের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমলাতন্ত্র থেকে প্রেষণে আসেন। রাজনৈতিক প্রভাব এবং আমলাতন্ত্রের প্রভাবে এক ধরনের জিম্মি অবস্থায় আছে। এই জিম্মিদশার মধ্যে দুদকের যারা অন্য কর্মী আছেন তাদের কর্মক্ষমতা, কর্মদক্ষতা বিকাশ প্রতিরোধ্য হয়। অন্য দিকে এই সুযোগে দুদকে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ”
প্রথম সভায় তারা কমিশনের দায়িত্ব, এখতিয়ার, কর্মপরিধি বোঝার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “দুদকের যে এখতিয়ার, তার দুটি আঙ্গিক হচ্ছে প্রতিকার ও প্রতিরোধ।
“প্রথমত. যারা দুর্নীতি করেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও বিচার করা করা। দ্বিতীয়ত. দুর্নীতি যাতে না হয়, তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দুটি বিষয়কে বিবেচনায় রেখে আমরা সংস্কারের জন্য কাজ করব।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুদকের কাজে বাধা তৈরি করা আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করা।
শুধু আইনি সংস্কার দিয়ে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটি ভাবা ঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে শাসন পদ্ধতির পাশাপাশি এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে যে, দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায়। সেটা কীভাবে প্রতিহত করা যায়, সেই জন্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন তারা।