সিইসির স্বস্তির কারণ, ভোটে ‘সহিংসতা হয়নি’, ভোটারদেরকে ‘কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়নি’। সন্তুষ্ট হতে না পারার কারণ, ভোটার উপস্থিতি ৬০ শতাংশ হয়নি।
Published : 09 Jun 2024, 08:28 PM
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মুখে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বস্তিতে থাকলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
তার স্বস্তির কারণ হল, ভোটে বলার মতো সহিংসতা হয়নি, আর সন্তুষ্ট না হওয়ার কারণ হলো ভোটার উপস্থিতি ৬০ শতাংশ না হওয়া।
রোববার বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে উপজেলা ভোট শেষ করে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া দেন সিইসি।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছটা ছিল স্পষ্ট ও ইতিবাচক। ভোটার উপস্থিতি কম হলেও সহিংসতা না থাকা স্বস্তিদায়ক।সার্বিকভাবে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশের যে ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমাদের নির্দেশনা তারা কঠোরভাবে প্রতিপালন করছেন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাও ছিল স্পষ্ট, খুব ইতিবাচক।”
গত ৮ মে, ২১ মে, ২৯ মে, ৫ জুন ও রোববার মিলিয়ে ৪৬৯ উপজেলার ভোট শেষ হয়েছে।
চারটি ধাপে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রেমালে কারণে আরেকটি ধাপ বেড়েছে। রোববার ১৯টি উপজেলায় নির্বাচন হল।
এবারের নির্বাচনের একটি বিশেষত্ব হল স্বতন্ত্র প্রার্থী। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক যুক্ত হওয়ার পর এবারই ‘অভিনব’ এমন নির্বাচন হল যেখানে প্রার্থীদের ৯৯ শতাংশেরও বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
যখন দলীয় প্রতীক ছাড়া স্থানীয় নির্বাচন হত, তখন দলগুলো পরোক্ষভাবে প্রার্থী দিত, কিংবা কোনো না কোনো নেতার প্রতি সমর্থন জানাত। এবারও তাও ছিল না।
এর কারণ আওয়ামী লীগ ভোটে প্রার্থী দেয়নি। আর বিএনপি বর্জন করলেও দলটির তৃণমূলের দুইশরও বেশি নেতা ভোটে ছিলেন। তাদেরও দলীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না।
এবারের নির্বাচনে সহিংসতাও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের মতো অভিযোগও সেভাবে আসেনি, যা গত এক দশক ধরে বারবার রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি করেছে এবং বিরোধীপক্ষ ভোটের বাইরে গিয়ে আন্দোলনে নেমেছে।
সিইসি বলেন, “এবার নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল, দেখা গেছে দুই একটি দল ছাড়া ওরা রাজনৈতিক প্রতীকে অংশগ্রহণ করেনি। যার ফলে নির্বাচনটা আগের মতো স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিভিত্তিক হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেছেন, তবে রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়।”
আরও পড়ুন:
স্থানীয় নির্বাচনেও কেন ভোটের হারে ভাটা?
রোববারের ভোটের সময় নানা অপরাধে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “এদের মধ্যে দুইজন পোলিং অফিসার নির্বাচনি অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন।”
ভোটে মোট চারজন আহত হলেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল বলেও মূল্যায়ন করেন তিনি।
রোববারের ভোটের মধ্য দিয়ে ৪৬৯টি উপজেলায় নির্বাচন শেষ হয়েছে। আরও ২৬টি উপজেলা নির্বাচন বাকি আছে। এর মধ্যে কয়েকটি এখনো মেয়াদপূর্তি হয়নি। কয়েকটি আদালতে নির্দেশনার কারণে স্থগিত রয়েছে৷
ভোটের হারে ‘লাফ’
রোববার যে ভোট হয়েছে, তাতে ভোটের হার আগের চার ধাপের তুলনায় বেশি ছিল বলে তথ্য মিলেছে।
সিইসি বলেন, “১ হাজার ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৫টি ভোটকেন্দ্রের হিসাব পেয়েছি৷ সেদিক থেকে ভোট পড়ে ৪৩.৯১%। পরে চূড়ান্ত কত ভোট পড়েছে বলা যাবে।”
এর আগে প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ-কখনো ভোটের হার ৪০ শতাংশ অতিক্রম করেনি।
প্রথম ধাপে ৩৬ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৩৬ শতাংশ ও চতুর্থ ধাপে ৩৪ শতাংশ ভোট পড়ে।
সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ভোটে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। এই হিসেবে গত এক দশকের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার এবারই সবচেয়ে কম।
অতীতের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে দায় নিতে চায় না নির্বাচন কমিশন। ভোটার আনার ‘দায়িত্ব’ প্রার্থীদের বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।
তিনি বলেন, “ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব হচ্ছে প্রার্থীদের। প্রার্থীরা তাদের কাছে আবেদন জানাতে পারে। এতে ভোটাররা কতটুকু সাড়া দেবে, এটা তাদের ওপর নির্ভর করে। তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন, কতটা তারা রাজনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন-ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে যারা বিচার বিশ্লেষণ করেন তারা হয়ত একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।”
তবে ভোটার উপস্থিতি নির্বাচন কমিশনের ‘বিবেচ্য নয়’ বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেন, “আমাদের জন্য বিবেচ্য হচ্ছে ভোট আয়োজন করা, ভোটটা যেন শান্তিপূর্ণভাবে, সুষ্ঠুভাবে হয় এবং ভোটার যারা তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে৷
“এখন যদি তারা ওখানে জোর করে ভোট দিয়ে থাকে তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। সেই দিকটা আমরা বিশেষ করে জোর দিয়েছি। কোনো কিছুই স্থির থাকে না৷ আশা করি এটা ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।”
বিরোধী পক্ষের ভোট বর্জনও কম উপস্থিতির একটি কারণ বলে মনে করেন সিইসি। তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে তো ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়নি। যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়, তখন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেদিক থেকে এটি একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে।”
উপস্থিতি ৬০-৭০% হলে ভালো হত
সিইসি বলেন, “সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির বিষয়টা চট করে বলতে পারব না৷ তবে এটা তো সন্তুষ্টি, স্বস্তিদায়ক; আমরা কোনো হতাহতের খবর শুনতে পাইনি। কেউ বলেনি ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি, ওদের বিতাড়িত করা হয়েছে।
“সেদিক থেকে এটা ইতিবাচক। এসব কারণে আমরা স্বস্তি বোধ করছি। তবে ভোটার পড়ার সংখ্যা ৬০ শতাংশ, ৭০ শতাংশ হত, তাহলে আপনাদের মতো আমরাও সন্তুষ্ট হতাম। আশা করি, মানুষ আগামীতে আরো সচেতন হবে এবং সশাসনের বিষয় নিয়ে আমাদের জনগণকে উপলব্ধি করাতে হবে। তারা সুশাসনের যে গণতান্ত্রিক চেতনা, তারাও হয়ত উপলব্ধি করে ভোটমুখী হবেন।”
আরও পড়ুন: