এমন তহবিল গঠনে সংসদে বেসরকারি সদস্য বিল তোলার প্রস্তাব দিয়েছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউএসএআইডি।
Published : 02 Aug 2023, 08:38 PM
রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নারী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের ব্যয় সরকারিভাবে জোগানর সুপারিশ এল এক মতবিনিময় সভা থেকে।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউএসএআইডির যৌথ আয়োজনে বুধবার ‘অ্যাডভান্সিং উইমেন্স লিডারশিপ ইন ইলেকশনস' শীর্ষক সভায় এই সুপারিশ আসে।
এ লক্ষ্যে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে আগামীতে ‘নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয় (নারী প্রার্থী), ২০২৩’ নামে একটি ‘বেসরকারি সদস্য বিল’ করার আহ্বান জানান ্আয়োজকরা।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি ডানা এল ওল্ডস বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনে নারীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থের প্রভাব ও পেশী শক্তি। প্রস্তাবিত এই বিলটি হয়ত বর্তমান সংসদে পাস হবে না; কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করি এ বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকবে এবং আগামীতে সংসদে তা পাস হবে।”
মন্ত্রী ছাড়া অন্য সংসদ সদস্য কর্তৃক উত্থাপিত বিলকে বেসরকারি সদস্য বিল বলা হয়। সংসদের কার্যপ্রণাণী ৭২ (১) বিধি অনুসারে মন্ত্রী ব্যতীত সব সংসদ সদস্য সংসদে বেসরকারি বিল উপস্থাপনের নোটিস দিতে পারেন।
ইউএসএআইডির ডেপুটি মিশন ডিরেক্টর সঞ্জয় রোনাল্ড কুপার বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসেবে নারীরা শুধু নারীর কথাই বলেন না, যারা কথা বলার সুযোগ পায় না তাদের কথাও নারীরা তুলে ধরেন। জনতহবিলের প্রচলন নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়তা করবে।”
মতবিনিময় সভায় বেসরকারি সদস্য বিলটির প্রাথমিক খসড়া উপস্থাপন করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আব্দুল আলীম।
সরকার নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি অর্থ-বছরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে, যা বাজেটের অংশ হিসেবে পরিগণিত হবে।
চূড়ান্তভাবে বৈধ শুধু নারী প্রার্থীদের (দলীয় ও স্বতন্ত্র) জন্যই এ তহবিল প্রযোজ্য হবে।
একই আসনে একাধিক নারী প্রার্থী থাকলে প্রত্যেকেই জনতহবিল হতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো নারী প্রার্থী যদি জনতহবিলের বরাদ্দ গ্রহণ করতে না চান, তার জন্য এ তহবিল প্রযোজ্য হবে না।
জনতহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে ইসিতে অভিযোগ দেওয়া যাবে, শুনানি করে তা ইসি নিষ্পত্তি করবে।
কোনো দল বা প্রার্থী তহবিল পাওয়ার পর শর্ত ভঙ্গ করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বা যে কোনো পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকলে বা নির্বাচন বর্জন করলে, তহবিল সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিল করা যাবে।
ইসি প্রতি অর্থ বছরে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থের যথাযথভাবে হিসাব সংরক্ষণ করবে ও অর্থ-বছর শেষ হলে তা অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর দাখিল করবে।
২০০৯ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন প্রার্থীদের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে নির্বাচনী ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়ে খসড়া করেছিল। কিন্তু শেষ পযন্ত তা আর সায় পায়নি সরকারের।
বুধবারের মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নারী প্রার্থীদের জনতহবিলের প্রস্তাবিত খসড়াটি নিয়ে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “একটা বেসরকারি সদস্য বিল- এটা সংসদে এমনি যাবে না। এটা যাবার জন্যে সংসদ নেতার অনুমতি লাগবে। সংসদ নেতার দৃষ্টিতেই যদি না থাকে, উনি যদি নাই জানেন এরকম কোনো উদ্যোগ হচ্ছে বা সংসদ সদস্যরা কাজ করছে, তাহলে সে বিল তো আলোর মুখ দেখবে না।
“কাজেই এটা করারও প্রক্রিয়া রয়েছে। সে ইনিশিয়েটিভটা যেহেতু শুরু হয়েছে, আশা করি আগামীতে এগিয়ে নিতে পারব। পরবর্তী সময়ে প্রতি জায়গায় সবাই কাজ করব।”
স্পিকার বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এখন খসড়াটি কোনো পর্যায়ে নেওয়া সম্ভবপর হবে না।
‘দলগুলোকে বড় ভূমিকা নিতে হবে’
সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন এবং সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে মনে করেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ আসনে বেশি করে নারীদের মনোনয়ন না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে না।
রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে নির্বাচনী আইনে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও) ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোকে পুরণ করার কথা ছিল। কিন্তু এসময়ের মধ্যে তা না হওয়ায় নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সাল।
প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, “এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যাদের, আমি বারবারই বলব সেটা রাজনৈতিক দল।”
“আশা করি, আগামীতে এ সংখ্যাটা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। যদি সব রাজনৈতিক দল আরও সচেতন হয়ে তারা যদি আরও নারীবান্ধব ভূমিকা রাখেন, তাহলে এটা সম্ভব।”
ইউএসএআইডির অর্থায়নে স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ -এসপিএল প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল, ‘নারীর জয় সবার জয়’ ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে নির্বাচনে সাধারণ আসনের প্রার্থী হিসাবে নারীদের অংশগ্রহণ এবং মনোনয়ন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দলের সাবেক ও বর্তমান প্রায় ১৫ জন নারী সংসদ সদস্য অংশ নেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি’র গুড গভর্নেন্স টিম লিডার মেধাবী গিরি, ডিআরজি অ্যাকটিং অফিস ডিরেক্টর মারিয়া রেনডন, পলিটিক্যাল প্রসেস অ্যাডভাইজার লুবাইন চৌধুরী মাসুম, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক লিপিকা রানী বিশ্বাস, শাম্মী লাইলা ইসলাম, উপ পরিচালক অনিন্দ্য রহমান।