“আমাদের মূল দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ নিয়ে বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করেননি; তাই নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে,” বলেন শেখ কাওছার।
Published : 08 Mar 2025, 04:17 PM
মূল বেতনের সমান উৎসব ভাতার দাবিতে আগামী বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
ঈদের আগেই এ দাবি আদায়ে ১৬ মার্চ সব জেলা ও বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ কাওছার আহমেদ।
বর্তমানে শিক্ষকরা দুই ঈদে মূল বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে তারা প্রতি মাসে ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
শেখ কাওছার বলেন, “বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) মহোদয় ঈদুল আযহা থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা কিছু বৃদ্ধির কথা বলেছেন, কিন্তু আমাদের দাবি ঈদুল ফিতর থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হোক। আর আমাদের মূল দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তাই নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
“বিগত সরকারও আমাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে দুইটি কমিটি গঠনের কথা বললেও আমরা কোনো সুফল পাইনি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাই আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। আমরা চাই, সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লিখিত ঘোষণা।"
শিক্ষক সমিতির দাবির মধ্যে রয়েছে-
• মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা।
• রোজার ঈদের আগেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়া।
• ইএফটির মাধ্যমে শিক্ষকদের এমপিও পরিশোধের সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।
• সরকারি স্কুলের মত বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ষষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সপ্তম গ্রেড উন্নীত করাসহ টাইম স্কেল দেওয়া।
• এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন বদলি প্রথা চালু করা।
• সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য পেনশন প্রথা চালু করা এবং পেনশন চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা পরিশোধ করা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে এ দুই খাতে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করা।
• শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মত ৬৫ বছরে উন্নীত করা।
• পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন করা।
• ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা।
• স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।
দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “আগামী ১২ মার্চ সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে বিটিএ।
“আর আগামী ১৬ মার্চ সকাল ১১টায় দেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “এর পরেও যদি দাবি পূরণে সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয়, তাহলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে সারা দেশের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কমচারীরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া এবং সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া ও মেডিকেল ভাতা প্রদানের দাবিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।