“আমরা উচ্চ কক্ষে একমত, তবে সংখ্যানুপাতিকে ভিন্নমত আছে,” বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক।
Published : 27 Apr 2025, 09:29 PM
সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সংসদ সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বলে তুলে ধরেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
স্বপন বলেন, “সেই জন্য পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছি এবং তার মেয়াদ তিন মাস।
“আমরা সংসদের উচ্চ কক্ষ থেকেই প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছি।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। ২০ মার্চ থেকে সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
সংবিধান সংস্কারের জন্য ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ নির্বাচনের প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে জেএসডি সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত যে সমস্ত প্রস্তাবনা আছে, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার করা সম্ভব নয়। যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে হবে, সেগুলো হতে পারে।
“সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের যে প্রস্তাবনা এসেছে সেটার মীমাংসা হবে।”
জাতীয় সংবিধানিক পরিষদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আংশিক একমত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে আমাদের ভিন্নমত আছে। সংসদের উচ্চ কক্ষে যে সংখ্যানুপাতিক হারে প্রস্তাব করা হয়েছে, আমরা উচ্চ কক্ষে একমত, তবে সংখ্যানুপাতিকে ভিন্নমত আছে। উচ্চ কক্ষে ২০০ আসন প্রস্তাব করেছি সেখানে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবীদের অদলীয় প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসামের পক্ষে মত দিয়েছেন তুলে ধরে স্বপন বলেন, “আমরা এক ব্যক্তির এক পদের বিষয়ে একমত হয়েছি।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল নেতা ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তিকে না করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
“এক ব্যক্তি জীবদ্দশায় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি দুইবার হতে পারবেন।”
স্বপন বলেন, “সংসদের মেয়াদ চার বছর করার জন্য বলেছি এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির প্রস্তাব দিয়েছি।”
জেএসডি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৯টিতে একমত, ১৭টিতে দ্বিমত, ২৭টিতে আংশিকভাবে একমত এবং তিনটিতে মতামত নেই বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
সংলাপে অংশ নেন জেএসডির আট নেতা। দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সহসভাপতি তানিয়া রব, সিরাজ মিয়া, সানোয়ার হোসেন তালুকদার, কে এম জাবির, তৌহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলালুজ্জামান।
সভা শেষে ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবনার লিখিত কপি সরবরাহ করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক।
জেএসডি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের নাম পরিবর্তেনের বিরোধিতা করেছে। দলটি বলেছে, বাংলাদেশের নাম ৫৩ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের নাম অনাবশ্যক পরিবর্তনের কারণে বিতর্কের জন্ম দেবে, যা পরিহার করা জরুরি।
জেএসডি নেতা স্বপন বলেন, “সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের চেতনা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নির্দেশনা, ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মার্চের ঘটনাবলী এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের বহি:প্রকাশ থাকার প্রস্তাব দিয়েছি।”
বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ অন্যান্য জাতি সত্তার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি বলেছে, “বাঙালি জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের মাধ্যমে জাতি রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছে, হঠাৎ করে বাঙালি জাতিসত্তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এ ধরণের পদক্ষেপ আত্মঘাতী।”