বিএনপির ‘হুমকি’ আমলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র, আশায় শাহরিয়ার

“আমি জানি না এটা সত্য কিনা,” বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জো বাইডেনকে উদ্দেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের কথিত চিঠি প্রসঙ্গে বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 02:25 PM
Updated : 31 May 2023, 02:25 PM

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া পুলিশ, সরকারি ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ বিষয়ে বিএনপি যে বক্তব্য দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তা ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

তিনি বলেছেন, বিএনপির ওই ‘হুমকি’ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ‘বাধার’ মধ্যে পড়ে। 

বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘নতুন ভিসা নীতি’ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এই ‘হুমকির’ বিষয়টিও আমলে নেবে। 

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দৈনিক ইত্তেফাক আয়োজিত ওই আলাপনে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বর্তমান সংবিধান ও বিচারকদের রায় অনুসারে বেআইনি। এবং এটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধার মধ্যে পড়ার যোগ্য। 

“পুলিশ কর্মকর্তা, প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তা যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাদের বিএনপির বন্ধুদের বক্তব্য, মন্তব্য ও মতামত গুরুতর হুমকি। এবং আমি আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি আমলে নেবে।” 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন গত ২৪ মে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। 

বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এর আওতায় পড়বে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। 

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে: ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। 

ওই ভিসানীতির ঘোষণা আসার পর থেকে বাংলাদেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে উদ্দেশ্য করে নানা বক্তব্য রাখছে। আওয়ামী লীগ বলছে, ২০১৪ সালের মত ভোট বর্জন করে নির্বাচন প্রতিহত করার মত কাজ করতে পারবে না বিএনপি।

অন্যদিকে এই ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি বলছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান সহায়ক হবে। তবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়ছে না।

‘ভিসা নীতির নির্বিচার ব্যবহার যেন না হয়’ 

যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নীতির নির্বিচার ব্যবহার যেন না হয়, সেই আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিকে ‘মূল্যায়ন বা টার্গেট’ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া যেন নিশ্চিত করা হয়। 

“আমরা যেটা জেনেছি, (কোনো পদক্ষেপ নিলে) কেবল ব্যক্তি জানতে পারবে এবং অন্য কেউ জানতে পারবে না যে, কাকে ভিসা দেওয়া হয়নি।” 

র‌্যাব ও এর সাত সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা ইঙ্গিত করছে আমরা নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর ক্ষেত্রে কাজ করছি। এটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সেই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। এটা একটা দিক। 

“দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, আইনি রাস্তা। আমরা সেদিকেও কার্যক্রম অব্যাহত রাখব, যেটা আমরা আগেই বলেছি।” 

নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ছয় কংগ্রেসম্যানের কথিত চিঠির প্রসঙ্গ 

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ছয় সদস্যের ‘লেখা’ কথিত এক চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে, বিএনপির কয়েকজন নেতাও সেটা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে লেখা কথিত সেই চিঠিতে ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

এ চিঠির সত্যাসত্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমি জানি না এটা সত্য কি-না। এটা যদি সত্য হয়েও থাকে, এমন প্রচেষ্টা প্রথম নয়। দলটি (বিএনপি) ক্ষমতায় আসতে চায় লুট এবং অপব্যবহার করতে, যেটা তারা ২০০১-২০০৬ সময়ে করেছে। 

“এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে লেখা নিবন্ধে ঠিক একই রকম আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমি সন্দিহান যে, এর মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কি-না।”

তিনি বলেন, “বিদেশি বন্ধু, রাজনীতিক, এমনকি সাংবাদিকদের মন্তব্য ব্যবহার ও বানানোর ইতিহাস বিএনপির রয়েছে। ২০১৫ সালে একটা ঘটনায় বিএনপি একই ধরনের দলিল বানিয়েছিল। ফলে, এক্ষেত্রে তাদেরকে নির্দোষ বলতে পারছি না আমি। অপেক্ষা করি এবং দেখি।” 

জিডিআই প্রসঙ্গ

চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) যোগদানের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন এই উদ্যোগে এখনো যোগ দেয়নি বাংলাদেশ। ঢাকা সফরে এসে জিডিআইর বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন চীনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। 

“এরপর আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করেছি, এটার বিস্তারিত জানার এবং ভালোমত বোঝার জন্য।” 

তিনি বলেন, “জিডিআই একটি নতুন উদ্যোগ। আমার কাছে বিস্তারিত নেই। এটা আপনাকে ওপেন সোর্স বা চীনা সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে।” 

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগদান করেছি, বুঝেশুনেই। বেল্ট অ্যান্ড রোড আপনারা জানেন ঐতিহাসিকভাবে আমাদের এশিয়া ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী অঞ্চল। 

“সেটার যে রুটটি ছিল, সিল্ক রোড বলা হত, বিভিন্ন সময়ে, সেটাকে অনেকটা পুনর্জন্মের একটা প্রচেষ্টা ছিল বিআরআই। এটাতে আমরা যেভাবে যুক্ত হয়েছি, পশ্চিমা দেশেরও, বিশেষ করে ইউরোপের বেশ কিছু রাষ্ট্রও যুক্ত হয়েছে। আমার মনে হয় না, সেখানে উদ্বেগ আছে।”