হাই কোর্টের আদেশ বহাল, ‘কারাগারেই থাকতে হবে’ সম্রাটকে

হাই কোর্টের আদেশে আত্মসমর্পণের পর সম্রাট এখন আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 05:23 AM
Updated : 10 August 2022, 05:23 AM

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, তা আপিল বিভাগেও বহাল রয়েছে।

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সম্রাটের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের আপিল বেঞ্চ বুধবার তা খারিজ করে দেয়। এ বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

আদালতে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

হাই কোর্টের আদেশে আত্মসমর্পণের পর সম্রাট এখন আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। আপিল বিভাগের আদেশের পর তাকে এখন ‘কারাগারেই থাকতে হবে’ বলে দুদকের আইনজীবীর ভাষ্য।

দুদকের আবেদনে গত ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ সম্রাটের জামিন বাতিল করে দেয়। সম্রাটকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে সম্রাট আপিল বিভাগে আবেদেন করলে গত ৮ অগাস্ট শুনানি হয়। বুধবার সর্বোচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দিল, তাতে হাই কোর্টের আদেশই বহাল থাকল।

Also Read: সম্রাটের জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

Also Read: মুক্তি পেলেন সম্রাট, আছেন হাসপাতালেই

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে অস্ত্র, অর্থ পাচার, মাদক ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের চার মামলায় জামিন পান ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। ৩১ মাস পর মুক্তি মেলে তার।

প্রায় দেড় বছর ধরে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন ছিলেন সম্রাট। ১১ মে বিকালে জামিনের কাগজপত্র হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানেই তার মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। মুক্তির পরও তাকে হাসপাতালের 'ডি' ব্লকের সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হার্টের ক্রনিক অসুখে’ আক্রান্ত সম্রাটকে হাসাপাতালেই রাখার পক্ষে তারা। তবে পরিবার চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য হাসপাতালে বা বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন।

এদিকে সম্রাটের জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১৪ মে হাই কোর্টে 'রিভিউ' আবেদন করে দুদক। চার দিন পর সম্রাটের জামিন বাতিল করে আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

Also Read: সম্রাটকে হাসপাতালেই রাখার পক্ষে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ

Also Read: চার মামলাতেই জামিন, সম্রাটের মুক্তিতে ‘বাধা নেই’

দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সেদিন বলেছিলেন, "হাই কোর্ট বলেছেন বিচারক মামলার গুণাগুণ বিচার না করে, শুধু মেডিকেল গ্রাউন্ডে এ জামিন দিয়েছেন।"

তিনি বলেন, কেউ যদি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে জামিন চান, তাহলে বিচারককে মেডিকেল রিপোর্ট কল করতে হবে, সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করতে হবে, এবং দুইপক্ষকে শুনতে হবে, তারপর জামিন দেবে কিনা আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।

“কিন্তু বিচারক ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছে, হাই কোর্ট আদেশে ঠিক এইভাবে অবজার্ভেশন দিয়েছে। বিচারক এই জামিন দিয়েছেন ২০২০ এবং ২০২১ সালের প্রথম দিকের দুটি মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে, শেষের দিকে লিখে দিয়েছেন আগামী ৯ তারিখের (৯ জুন) রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।”

হাই কোর্টের ওই আদেশের পর ২৩ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সম্রাট। পরেতাকে আবার কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত এই নেতা সম্রাট।

এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

সেদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

কার্যালয়ে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে অর্থপাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগেও সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

অস্ত্র মামলা: সম্রাটের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার মামলার মধ্যে রমনা থানার অস্ত্র মামলাটিতে ২০১৯ সালে বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলায় সম্রাটের জামিন হয় চলতি বছরের ১০ এপ্রিল।

অর্থ পাচার মামলা: সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এরপর ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র‌্যাব। এই মামলায় সম্রাটের জামিন হয় অস্ত্র মামলার জামিন হওয়ার দিনে, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল।

মাদক মামলা: ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০১৯ সালে। এই মামলায় সম্রাটের জামিন আদেশ আসে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা: ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। গত ১১ মে এ মামলায় জামিন পেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ মামলা বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।