কোভিডের সব ধরনের জন্য এক টিকা? ‘আশাবাদী’ নন গিলবার্ট

ঢাকা লিট ফেস্টে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার এ সহ আবিষ্কারক; বক্তব্য দেন উৎসবের দ্বিতীয় দিনে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 04:54 PM
Updated : 6 Jan 2023, 04:54 PM

শুধু একটি টিকা দিয়ে সব ধরনের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের উপায় বের করতে আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আবিষ্কারকের একজন সারাহ গিলবার্ট।

করোনাভাইরাসের সব ধরনের জন্য এক টিকা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে শুক্রবার ঢাকা লিট ফেস্টের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “আমি এক্ষেত্রে তেমনটি আশাবাদী নই।”

হলভর্তি শ্রোতা-দর্শকদের সামনে এর কারণ ব্যাখ্যা করে এ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বলেন, করোনাভাইরাসের উপরিভাগে 'স্পাইক' প্রোটিন তৈরিতে কাজ করে এবং ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। তবে কিছু কিছু ধরনের ক্ষেত্রে 'স্পাইক' প্রোটিন তৈরির ধারা বদল হয়ে যায়।

“এখনও বিভিন্ন ধরনের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা যদি এমন কিছু চাই যা বিস্তৃত পরিসরে সবগুলো উৎসের ক্ষেত্রে কাজ করবে, সেজন্য আরও অনেক গবেষণা করতে হবে।”

ঢাকার বাংলা একাডেমিতে চলমান দশম ঢাকা লিট ফেস্টে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সহ আবিষ্কারক সারাহ গিলবার্ট।

শুক্রবার এ সাহিত্য আসরের দ্বিতীয় দিনে নারী বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নিয়ে ‘মেরি কুরির পদচিহ্ন ধরে’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

এর এক ফাঁকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ এ বিজ্ঞানী বলেন, সামনের দিনগুলোতে করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যে খুবই ‘সামান্য প্রভাব’ ফেলবে।

Also Read: কোভিড একসময় সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরে পরিণত হবে: সারাহ গিলবার্ট

তার বিশ্বাস, একটা সময় সার্স-কোভ-২ এর প্রভাব এতটাই কম হবে যে চিকিৎসকরা তা পরীক্ষা করার প্রয়োজনও মনে করবেন না। তবে এ ভাইরাস নতুন নতুন উপধরনের মাধ্যমে ফিরে আসবে। এতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। আর তা হঠাৎ আরও বড় ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন না তিনি।

চীনে নতুন করে সংক্রমণ বিস্তার লাভ করেছে। কোভিড ১৯ এর একটি অতি সংক্রামক একটি নতুন উপধরন মারাত্মক আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। এমন খবরে সম্প্রতি দেশে দেশে নতুন করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে টিকা নিয়ে কাজ করা এ বিজ্ঞানীর মতে, কোভিডের আবিষ্কার করা টিকাগুলো সব উপধরনের বিরুদ্ধে এখনও ঠিকঠাক কাজ করছে।

তিনি বলেন, টিকা ও মৃদু আক্রান্ত হওয়ার কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ স্থানে এখন মানুষের মধ্যে ‘ইমিউনিটি’ তৈরি হয়েছে। এর অর্থ তারা ‘ব্রড ইমিউনিটির’ মধ্যে রয়েছে, যা তাদের উপধরনগুলোর বিরুদ্ধে রক্ষা করছে। এসব কারণেই ভবিষ্যতে সার্স-কোভ-২ এর প্রভাব থাকব না বললেই চলে, বলে যোগ করেন তিনি।

“অন্য আরও চার করোনাভাইরাসের মত এটিই একটি ভাইরাসে পরিণত হবে যেগুলো নিয়ে এখন আমরা ভাবি না বললেই চলে।“

এই বিজ্ঞানী জানান, এরমধ্যেই মধ্যে তিনি অন্য রোগের বিষয়ে অধিক মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন। নতুন সংক্রামক অন্য ভাইরাস নিয়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি। সুনির্দিষ্ট করে বললে, নিপাহ ভাইরাসের বিষয়ে নিয়ে তিনি এখন নজর দিচ্ছেন। এ ভাইরাসের আক্রান্তদের মৃত্যুহার বেশি। বাংলাদেশেও এ ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তিনি মার্স ভাইরাসের টিকা নিয়ে কাজ করার কথাও জানান।

বিশ্বজুড়ে টিকা উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে গিলবার্ট বলেন, এতে করে ভবিষ্যতে বড় পরিসরে দ্রুত টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি লাইসেন্সের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করার পরামর্শও দেন।

২০১৯ সালের একবারে শেষ দিকে চীনে এবং এরপর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দিনের পর দিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন মরণঘাতি এ ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের মহাযজ্ঞে নামেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিকা আবিষ্কারের প্রকল্প নেয়, তাতে খ্যাতনামা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে প্রকল্প প্রধান নির্বাচিত হন সারাহ গিলবার্ট।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের এ অধ্যাপকের রয়েছে নতুন নতুন টিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রায় তিন দশকের অভিজ্ঞতা।

এ টিকা আবিষ্কারের পর বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পেরিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বরে মানবশরীরে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদনের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ শুরু হয়।

ওই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদনের স্বত্ব কিনে তা উৎপাদন করে ভারতের ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। পরে তা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে দুই ডোজের সেই টিকা দেওয়া হয়।

ভারতের উপহার এবং সেরাম ইনস্টিউট থেকে কেনা টিকা দিয়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশে কোভিড ১৯ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামগ্রিক কার্যকারিতা বিবেচনায় অন্য টিকা থেকে পিছিয়ে থাকলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা প্রাপ্তি সহজ করতে সারাহ গিলবার্টদের আবিষ্কৃত টিকাকে সামনে সারিতে রেখেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এর পেছনে কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, টিকার স্বত্বে ছাড় দেওয়ায় সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায় এ টিকা। অন্যদিকে, অন্যান্য টিকা বিশেষ তাপমাত্রায় রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারায় এটার পরিবহন ও প্রয়োগের কাজ ছিল খুব সহজ।

শুক্রবার ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সহ আবিষ্কারক সারাহ গিলবার্ট কোভিড টিকা, ভাইরাস নিয়ে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার সঞ্চালনায় ওই আলোচনায় আরও ছিলেন ইলিশের জিন রহস্য ও পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসিনা খান এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইয়াসমীন হক।

বিজ্ঞান নিয়ে গিলবার্টদের এ আলোচনায় একেবারে পরিপূর্ণ ছিল বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন। অনেক শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

আলোচনায় করোনাভাইরাসের সব ধরনের বিরুদ্ধে এক টিকা ব্যবহারের চেয়ে বড় পরিসরে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক গিলবার্ট।

সংক্রমণ কমে এলেও বিশ্বজুড়ে কোভিড টিকার কার্যক্রম এখনও চলমান থাকার মধ্যে তিনি বলেন, “এখনকার চিন্তার বিষয় হল আপনি বেশি কার্যকারিতা চান, না বড় পরিসরে টিকাদান করতে চান। দুটো একসঙ্গে পাওয়ার আশা আমি এখনও দেখছি না।”

করোনাভাইরাসের মুখে খাওয়া টিকার সম্ভাব্যতা নিয়েও তার কাছে জানতে অনুষ্ঠানে জানতে চান এক দর্শক।

পোলিওসহ অন্যান্য টিকার মত সেটি না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্বব্যাপী টিকা আবিষ্কারে অগ্রণী এই বিজ্ঞানী বলেন, “সব ধরনের ভ্যাকসিন খাওয়ানো যাবে না। কারণ এটা করতে গেলে আমাদের শরীর হজম করে ফেলে। এখন কিছু টিকা নাকে বা শ্বাস টেনে ফুসফুসে নেওয়া হচ্ছে। ফুসফুস বড় জায়গা, এ কারণে সেটাতে নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিরোধী অবস্থান তৈরি করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়।

“যখন আমরা বড় পরিসরে টিকা দিচ্ছি, তখন এটা কতটা কার্যকর হচ্ছে তা দেখতে হয়। মাংসপেশীতে দিলে সেখান থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা পেতে সুবিধা হয়। কিন্তু আমরা যখন ফুসফুসের দিকে নিবদ্ধ করে টিকা দিই, তখন সেটা থেকে এমন ধরনের টিকার কার্যকারিতা বের করা শ্রমসাধ্য হয়ে যায়। তবে এটা নিয়েও কাজ চলছে।”

অনুষ্ঠানে তিনি কোভিড ছাড়াও অন্য টিকার প্রসঙ্গেও কথা বলেন। ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরির গবেষণা করার মাধ্যমে টিকা তৈরি ও গবেষণার বিস্তৃত জগতে কাজের সূচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন গিলবার্ট।

তিনি বলেন, “অনেক বছর পরে আমি ভাইরাসবিরোধী টিকার প্রযুক্তি তৈরির সঙ্গে যুক্ত হই, যা প্রাদুর্ভাব বা মহামারী ঘটায়। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে আমরা মহামারীর চেয়ে শুধু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দিকে নিবদ্ধ ছিলাম।”

‘গবেষণা হচ্ছে প্রেমের গল্পের মত’

আলোচনায় বিজ্ঞান ও গবেষণার সঙ্গে নিজেদের পথচলার পাশাপাশি তরুণদের এসব ক্ষেত্রে আগ্রহী হওয়ার পথ বাতলে দেন আলোচক তিন নারী বিজ্ঞানী।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, “বিজ্ঞান ও গবেষণা হচ্ছে প্রেমের গল্পের মত। এটাতে কৌতুহল আছে, আছে দুশ্চিন্তা, মনভাঙা, সংগ্রাম আর মজা।

“প্রতিটি সকালে এটা আমার কাছে চুম্বক আকর্ষণের মত মনে হয় এবং এখনও আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় কোনো কার্যসাধন হলে। চিন্তা করুন এটা কতটা মজার। সুতরাং গবেষক হও, বিজ্ঞানী হও।”

শীর্ষস্থানীয় টিকা বিজ্ঞানী হওয়ার পেছনে তার সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে সারাহ গিলবার্ট বলেন, “আমি মনে করি, ক্যারিয়ার পরামর্শ ফেলে আমি আরও ভালো কিছু করতাম। আমি যখন উচ্চতর গবেষণা করতে চাই, তখন জানতে পারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণার জন্য ফান্ড পাব না।

“এ কারণে আমি অন্যের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি, অর্থায়নের জন্য। সুতরাং বলতে পারি, সফলতা খুব ধীরগতিতে আসতে পারে, তার মানে এই নয় যে কেউ তার যাত্রাটা উপভোগ করবে না।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সারাহ গিলবার্ট বলেন, “এমন বিষয় বাছাই কর, যা তোমাকে আগ্রহী করবে। এটা হতে হবে এমন বিষয় যা তুমি পড়তে চাও, যাতে তুমি শ্রম দেবে।

“এমন বিষয় বাছাই করবে না, যা করার উচিত বলে তুমি ভাববে বা যা করলে বেশি টাকা উপার্জন করা যাবে। এমন কিছু করো, যা তোমাকে সত্যিকার অর্থে আগ্রহী করবে, যা দিনশেষে তাতেই তোমার সফলতা আসবে।”

অধ্যাপক ইয়াসমীন হক বলেন, “গবেষণা হচ্ছে বেশ মজার। সুতরাং গবেষণায় যুক্ত হও। তুমি একটা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছো, তুমি এমন কিছু করতে চাচ্ছ যা হয়ত সেভাবে কাজ করছে না। এবং হঠাৎ করে এটাতে কাজ হয়ে গেল। এটার আনন্দ তখন অসাধারণ।”

দেশে স্বল্প সুযোগ সুবিধার মধ্যেও নিজেদের প্রথম দিককার গবেষণা জীবনের সংগ্রামের কথা এ সময় তুলে ধরেন অধ্যাপক হাসিনা ও অধ্যাপক ইয়াসমিন। সেই সংগ্রামের ফসল ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তির বিকাশে সেসব কাজ এখন সহজ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তারা।

গবেষণার অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ তৈরির পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ইয়াসমীন বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ খুব বেশি পরিমাণে দরকার।

“আমরা যখন গবেষণা করি, আমাদের কাজে যদি শিল্পগোষ্ঠীরা আগ্রহী হয়, এভাবে বৃত্ত তৈরি হবে। কারণ তারা গবেষণায় অর্থায়ন করছে। কেননা আপনি কেবল সরকারের উপর নির্ভর করতে পারেন না। শিল্পগোষ্ঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ হলে অর্থায়ন খুব ভালোভাবে হতে পারে।”