আর নয় অশান্তি, সংঘাত: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, “একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই পরিবেশ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের সহায়ক এবং সকলকে এটি মনে রাখতে হবে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2023, 11:04 AM
Updated : 28 May 2023, 11:04 AM

বাংলাদেশ আর কোনো সংঘাত চায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; তিনি জানিয়েছেন, জনগণের জীবনমানের উন্নতিই তার লক্ষ্য।

২০০৯ সাল থেকে টানা সরকারে থাকায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করেছে বলেও দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ টেকসেই উন্নয়নের শর্ত।

বাসস জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আর কোনো অশান্তি, সংঘাত চাই না। আমরা মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চাই এবং আমরা সর্বদা এটি কামনা করি।”

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “অব্যাহত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে।”

সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলেই দারিদ্র্যের হার ও মাতৃমৃত্যু কমানো গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার হার এবং মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ‘একমাত্র কারণ’।

“একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই পরিবেশ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়ক এবং সকলকে এটি মনে রাখতে হবে।”

১৪ বছরের শাসনামলে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টিও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।

তিনি বলেন, “যেখানে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, তা আজ ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।”

এ দেশে কোনো মানুষ দরিদ্র, গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না বলেও আশাবাদী সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “প্রতিটি মানুষ অন্তত তাদের মৌলিক অধিকার- খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান পাবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার কথাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, “তখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা অন্তত এটা বলতে পারি যে আমরা একটি ভিত্তি তৈরি করেছি। মাঝখানে একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল (২০০১ থেকে ২০০৮)।”

বঙ্গবন্ধুর নামে শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা

দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি পুরস্কার’ প্রবর্তনেরও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “কারণ আমরা শান্তি চাই এবং আমরা অবশ্যই শান্তির পথে এগিয়ে যাব।”

জাতির পিতাকে হত্যার প্রসঙ্গও উঠে আসে তার বড় মেয়ের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমাদের কি দুর্ভাগ্য! যে মানুষটি সারাজীবন শান্তির কথা বলেছেন তাকে তার জীবন দিতে হয়েছিল।

“যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে।…. প্রতি মুহূর্তে আমাদের তাদের (স্বাধীনতা বিরোধীদের) বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে।”

‘জনগণই শক্তি, জনগণই শক্তির উৎস’- বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী এবং সেই বিশ্বাস নিয়েই আমার পথচলা।”

বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এক নম্বর দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখছি।

“আমরা বাংলাদেশের মানুষ, সব সময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে চাই।”

আলোচনায় বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে বৈশ্বিক সংঘাতময় পরিস্থিতিও। তিনি বিবাদমান সব পক্ষের প্রতি আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, অস্ত্রের ব্যবহার কখনও ভালো কিছু আনে না।

কেন এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা?- এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য যে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্ষুধার্ত শিশু ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে না কেন? এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য হাজার হাজার শিশু ও নারী বিশ্বজুড়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।

“আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক, (পৃথিবীতে) কোনো ধরনের অশান্তি থাকবে না।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মূল বক্তব্য রাখেন রাজনীতিবিদ ও গবেষক মোনায়েম সরকার।

মূল বক্তব্যের উপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু।

শুরুতেই বঙ্গবন্ধু এবং তার জুলিও-কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

স্মারক ডাকটিকিট

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও-কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও প্রথম দিনের কভার উন্মোচন করেন। তিনি দিবসটি উপলক্ষে একটি স্যুভেনিরের প্রচ্ছদও উন্মোচন করেন।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

ফিদেল কাস্ত্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভাদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার টেরিজা, পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহেরু, মার্টিন লুথার কিং এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের মত ব্যক্তিরা এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বিশ্ব শান্তি পরিষদের শান্তি পুরস্কারটি ছিল বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আর সেটি ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী মেরি কুরি এবং পিয়েরে কুরির অবদানকে স্মরণ করতে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানবিক কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৫০ সাল থেকে জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কার দিয়ে আসছে।