৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়।
Published : 09 Oct 2024, 12:58 PM
ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হল।
বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয় 'কল্পারম্ভ'। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে।"
দেশ এবং সারা বিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করা হয় এ সময়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, শাস্ত্র মতে, দুর্গা এবার মর্তে এসেছেন দোলায় চেপে, ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে।
ষষ্ঠী পূজার আগে মঙ্গলবার হয় বোধন বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। এরপর বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী, শুক্রবার অক্টোবর মহাঅষ্টমী এবং শনিবার মহানবমী। এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হবে।
রোববার বিজয়া দশমীতে দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা বলা হয় অকাল বোধন।
প্রণব চক্রবর্তী বলেন, "স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে পদার্পণ করলেন দেবী। এ সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, স্বরস্বর্তী চার সন্তান। আরও রয়েছে কার্তিকের কলা বউ।
"ষষ্ঠীতে এই সময়টায় দেবী বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন। বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়। এবার তিথির কারণে বোধন আমরা গতকাল সন্ধ্যায় করেছি। ফলে দেবীর জাগরণ হয়ে গেছে। আজকে পূজা এবং চণ্ডীপাঠ হবে এবং সন্ধ্যায় হবে আমন্ত্রণ ও অধিবাস।"
ষষ্ঠীর দিন সকালে ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচিত করা হয়, এবং এ সময় লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে দেবী দুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোর থেকেই পূজার আয়োজনের ব্যস্ততা দেখা যায়। দেবীর আরাধনায় ভক্তরা ভিড় করেন সেখানে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বরুণ চক্রবর্তী বলেন, "ষষ্ঠীতে সাধারণত মেয়েরা এসে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানেরা যেন মেধাবী হয়, সুস্বাস্থের অধিকারী হন এবং যাদের সন্তান হয় না, তারা সন্তানের আশা নিয়ে পূজা করেন। সন্তানের মঙ্গল প্রত্যাশা করে ষষ্ঠীর পূজাতে আসেন অনেকে।"
পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার দেবী এসেছেন দোলায় চেপে।পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফলাফল হয় ‘মড়ক’, যা শুভ ইঙ্গিত নয়। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে। রোগব্যাধি বাড়বে।
“এছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ‘ছত্রভঙ্গ’। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। একটা বিশৃংখল অবস্থা তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়।”
পূজার একটি দিনে শান্তির প্রত্যাশায় ভক্তরা দেবীর আরাধনায় রত হবেন জানিয়ে রাজিব চক্রবর্তী বলেন, “ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলে দেবী হয়ত সবার জীবনে শান্তির সুবাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। আমরা প্রার্থনা করব, বিশ্বজুড়ে যেন শান্তি বজায় থাকে।”
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি ।
তবে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা হচ্ছে, গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে।সে হিসেবে মহানগরে পূজামণ্ডপ চারটি বেড়েছে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, “প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি।"