“সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু কারো বাবা, ভাই বা বোন নয়; এতে একেকটি সম্ভাবনারও অপমৃত্যু হয়৷”
Published : 22 Oct 2024, 04:58 PM
সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুকে ‘কাঠামোগত হত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে’ সদস্য সচিব তানজিদ মো. সোহরাব রেজা।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
২০১৮ সালের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ সদস্য সচিব, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তানজিদ মো. সোহরাব রেজা তার বক্তব্যে সড়ক ব্যবস্থাপনা খাতে নৈরাজ্যের নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷
তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই দৈবাৎ ঘটনা নয়৷ প্রতিদিন গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলাকে আমি বলব অবকাঠামোগত হত্যা। এখানে পলিসি লেভেলের ভুল তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রায়োগিক দুর্বলতা৷”
রাজধানীর সড়কে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার তাগিদ দেন রেজা।
অনুষ্ঠানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাতিলের দাবি জানান শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নিশিতা জাহান।
এছাড়া পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সড়ক মহাসড়কের দুর্ঘটনার তথ্য পরিসংখ্যান হিসেবে নয়, মানবিক বিষয় হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা এখন কোনো পরিসংখ্যান নয়৷ গত নয় মাসে, তার আগের নয় মাসে সড়কে কত জন নিহত হয়েছেন; সড়ক দুর্ঘটনায় কত প্রবৃদ্ধি হল, এসব পরিসংখ্যান আর নয়৷
“সড়ক দুর্ঘটনাকে আমরা মানবিক বিষয় হিসেবে দেখছি৷ কারণ সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু কারও বাবা, ভাই বা বোন নয়; এতে একেকটি সম্ভাবনারও অপমৃত্যু হয়৷”
সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার গাফিলতি তদন্ত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এখন শিক্ষার্থীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াছীন বলেন, “বাস্তবিক অর্থেই আমরা সড়ক নির্বিঘ্ন করতে পারিনি৷ যারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছি, তাদের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার কাজে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার কথা৷ কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি, তাই এর ব্যর্থতার বেশিরভাগ আমাদের৷”
তিনি বলেন, “সড়ক পরিবহন খাতে শাজাহান খানরা কিন্তু এখনো রয়ে গেছেন৷ শাজাহান খান অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে বলতেন, ড্রাইভাররা সড়কে গরু আর বলদ চিনলেই হবে৷ এমন মানুষ এখনো রয়ে গেছেন পরিবহন খাতে৷ তাদের চিনে রাখা দরকার৷”
গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার সড়কে নিহত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তাসনিম জাহান এবং গুরুতর আহত তার বোন নুসরাত জাহানের বাবা এস এম সাইফুল আলম সগীরের হাতে অনুষ্ঠানে ৬ লাখ টাকার চেক তুলে দেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান৷