সেতু বিভাগ জানিয়েছে, এই হামলায় ৫৫টি গাড়ি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এছাড়া ভবনের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টার পুড়ে গেছে পুরোপুরি।
Published : 23 Jul 2024, 10:57 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দুই দফা নাশকতায় বনানীর সেতু ভবনের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ কত, এখন সেই হিসাব কষছে কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারীদের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার সময় গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন আক্রান্ত হয় দুই দিনই।
হামলার সময় সেতু ভবনের সামনে থাকা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় নিচতলাসহ কয়েকটি ফ্লোর। সেসব ফ্লোরে ভাঙচুর চালায় হামলাকারীরা।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, এই হামলায় ৫৫টি গাড়ি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এছাড়া ভবনের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টার পুড়ে গেছে পুরোপুরি। উপরের ফ্লোরগুলো পুড়েছে কম, তবে সেখানেও ক্ষতি হয়েছে।
ওই ঘটনায় সেতু ভবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণসহ সার্বিক বিষয় তদন্তে অতিরিক্ত সচিব রাশিদুল হাসানকে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে সেতু বিভাগ।
রাশিদুল হাসান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিনের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা হিসাব করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহার উপযোগী কি না পরীক্ষা করতে সোমবার গণপূর্ত অধিদপ্তর, ডেসকোর প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওই দুটি সংস্থার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে সেতু বিভাগ।
“তারা হয়ত শিগগিরই আমাদের রিপোর্ট দেবেন। তখন জানা যাবে ভবনটি কবে থেকে ব্যবহার করা যাবে।”
রাশিদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় কোনো দলিলপত্র নষ্ট হয়েছে কিনা সে বিষয়টিও দেখছেন তারা।
“বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, তাই ক্ষতির আর্থিকমূল্য এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। আমাদের কর্মকর্তারা যাচ্ছেন, দেখছেন যে গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র নষ্ট হয়েছে কি না। অফিস পুরোপুরি খুললে বিষয়টি আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”
মঙ্গলবার সেতু ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো প্রাঙ্গনটি ধ্বসংস্তুপে পরিণত হয়েছে। ভবনের সামনে সারি করে রাখা যানবাহনগুলোর পোড়া কঙ্কাল পড়ে আছে। সেতু ভবনেও রয়ে গেছে ক্ষতচিহ্ন, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভবনের সামনে।
সেতু ভবনের সামনে বসে গল্প করছিলেন কয়েকজন কর্মী। তাদের একজন সেতু ভবনের গাড়িচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর সড়কের দখল ছিল আন্দোলনকারীদের হাতে। একপর্যায়ে বেলা সোয়া পাঁচটার দিকে সেতু ভবনের ফটক টপকে ভেতরে চলে আসে কয়েকজন।
“তারা প্রধান ফটক খুলে দিলে ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে শতাধিক লোক ভেতরে ঢুকে পড়ে। প্রথমেই তারা একটি মিনিবাস ভাঙচুর করে। পরে আরেকটি মাইক্রোবাস ভেঙে দিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে সবগুলো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আরেক দল সেতু ভবনে ঢুকে পড়ে। ভাঙচুর করে প্রথমে ডে-কেয়ার সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারা ছয় তলা পর্যন্ত উঠে ভাঙচুর চালায়, লুটপাট করে।”
তিনি বলেন, “দুইশর বেশি মানুষ ছিল। আমাদের অস্ত্রধারী আনসার সদস্যরাও সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা বেশি তাণ্ডব চালাইছে দুই, তিন ও চার তলায়। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, ফ্যান, আসবাবপত্র যা পেয়েছে নিয়ে গেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখেছি তাদের তাণ্ডব। তারা কিছুই রাখে নাই। তারা ছাত্র ছিল না, ছাত্ররা এমন করতে পারে না।”
আন্দোলনের সময় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালীর টোলপ্লাজাও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি টোলপ্লাজা এবং শুক্রবার মহাখালী টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়।
এই দুটি টোলপ্লাজা আপাতত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এএইচএমএস আকতার বলেন, দুটি টোলপ্লাজার কম্পিউটার সিস্টেমসহ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
“সেখানে কি কি জিনিস নষ্ট হয়েছে তা দেখছে আমাদের কর্মীরা। একটা অ্যাসেসমেন্ট করে দেখবে কী কী ক্ষতি হয়েছে। এরপর এগুলো সব রিপেয়ার করতে হবে। সে কারণে এখনও টাইমলাইন ঠিক করতে পারে নাই। ফলে ঠিক কবে এই দুটি টোলপ্লাজা চালু হবে বলা যাচ্ছে না।”