Published : 04 May 2025, 07:10 PM
নতুন অর্থবছরের জন্য ব্যবসায়ীদের তরফে আসা প্রস্তাব ‘ন্যায্য ও যৌক্তিক’ হলেও করহার না কমানোর আভাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তবে যেসব আইন ব্যবসায় বাধা তৈরি করছে কিংবা ব্যবসার খরচ বাড়াচ্ছে, সেগুলো ‘সহজ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
রোববার এক সেমিনারে চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা যেসব সুপারিশ ও দাবি পাচ্ছি, তার বেশির ভাগই কর কমানো নিয়ে। আমি বলছি না, এসব দাবি ও সুপারিশ অযৌক্তিক; প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক।
“কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার জন্য রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন।”
তিনি বলেন, “এবারের বাজেটে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নীতির প্রক্রিয়াগুলো সহজ করার, যেন ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হয়। আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস—এ তিন খাতে যেন কমপ্লায়েন্ট হওয়ার খরচ এবং সরকারের কর রাজস্ব না কমে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
রাজধানীর একটি হোটেলে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) এ সেমিনার আয়োজন করে।
সেখানে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আপনারা বার্তাটি অবশ্যই বুঝবেন যে, সরকার আপনাদের অভিযোগ ও সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং আমরা সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ও স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
স্নেহাশীষ বড়ুয়ার মতে, দেশের বেসরকারি খাতের বড় অংশ কর না দেওয়ায় তার বোঝা গিয়ে পড়ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো ওপর, যারা পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স মেনে ব্যবসা করছে।
করজাল বাড়াতে এনবিআরের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সঙ্গে এনবিআরের অংশীদারত্ব করা প্রয়োজন। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র সংগ্রহের কাজটি করছে। দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবে যা ঘটছে তা হল, তারা এটি না করায় এর পুরো দায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“যদি এনবিআর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সঙ্গে অংশীদারত্ব করতে পারে, তাহলে তারা কর কমপ্লায়েন্স উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারবে। আমরা এ সুপারিশও করেছি যে, ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিধান থাকা উচিত।”
বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সমতাভিত্তিক আইন চান এফআইসিসিআই সভাপতি জাবেদ আখতার।
তিনি বলেন, “আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছি, তখন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে, তারা আসবে আমাদের (বাংলাদেশের) একটি ইউনিক অবস্থানের কারণে, যার ফলে আমরা গ্রিন ভ্যালু চেইন বা টেকসই উৎপাদন শৃঙ্খলা অর্জন করতে পারি।
“কিন্তু আমি যখন শুনি কীভাবে টেকসই ভ্যালু চেইন তৈরি করা যায়, তখন মনে হয় আমরা অনেক বিনিয়োগ করেছি এবং বেশকিছু ভালো উদ্যোগও নিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যখন আপনি আইন-কানুন দেখবেন, তখন দেখবেন অনেক ক্ষেত্রেই এটি ন্যায্য নয়।
“আমি এটাও বলছি না যে আমাকে সুবিধা দিতে হবে, কারণ আমি ক্লিন চেইন চালাই। আমার প্রশ্ন হলো— আপনি এটি সমতাভিত্তিক করতে পারেন কি?”
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান শিকদার, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, বাংলাদেশে মারুবেনি করপোরেশনের কান্ট্রি হেড মানাবু সুগাওয়ারা ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের যুগ্ম মহাসচিব ইউজি আন্দো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির সভাপতি মারিয়া হাওলাদার। বক্তব্য দেন জেবিসিসিআই সভাপতি তারেক রফি ভুঁইয়াও।