Published : 04 May 2025, 01:43 PM
সংস্কার কাজে ‘দিনের পর দিন’ সময় দিতে রাজি নন ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
তিনি বলেছেন, “আমরা দিনের পর দিন কালক্ষেপণ করতে রাজি নয়। যত দ্রুত সম্ভব- আমরা ন্যূনতম একটা ঐকমত্যের জায়গায় এক হতে পারি; বাকি যদি কিছু অসমাপ্ত থাকে, অনৈক্য থাকে- পরবর্তী কালের প্রবাহে সেগুলোতে আমরা সংশোধন করতে পারব।”
রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জোটের ১১ নেতা অংশ নিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত পার্থক্য ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক মন্তব্য করে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “এখানেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, এইখানেই গণতন্ত্রের উৎকর্ষতা। কিন্তু তার মধ্যে আমরা একটা নূন্যতম ঐকমত্যে উপনীত হতে পারি, যাতে আগামী দিনে আর কখনও স্বৈরশাসনের উৎপত্তি হতে না পারে।
“অন্তত এই রাষ্ট্র কাঠামোর বিধিমালা তার সুযোগ নিয়ে যাতে নতুন কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি, নতুন কোনো চিফ জাস্টিস সেই সংবিধানকে আমূল পাল্টে দিয়ে একটা স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত যাতে না করতে পারে; মূলত সেটা আমাদের উদ্দেশ্য।”
তিনি বলেন, “আজকে আমাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রদান করা, দেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। সেটা বিলম্বিত না হোক।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মুহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।
সংলাপের শুরুতে তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব কেবলমাত্র জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয়। আপনারা যারা সংগ্রামে আছেন, আপনারা যারা আজ আমাদের সাথে কথা বলছেন, আপনারা আপনাদের সহযোগীদের সাথে কথা বলুন, অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সাথে কথা বলুন- কী করে আমরা এক জায়গায় আসতে পারি।
“আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আমরা সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গাগুলোতে আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর পরিকল্পনার কথা জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “যে সমস্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করতে চাই।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য সুস্পষ্ট জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা চাই, সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে- যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণ করবে।
“বাংলাদেশ গভীর অন্ধকারের পতিত হয়েছিল। একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের পদতলে পিষ্ট হয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন আশাহত, সেই সময় তরুণদের অভ্যুত্থানের ডাকে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ সাড়া দিয়েছেন।”
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে পাঠিয়ে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে। এরপর তাদের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।