শপথ গ্রহণের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদী।
Published : 16 Aug 2024, 06:17 PM
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ফোনালাপে বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মোদীকে আশ্বস্ত করেছেন ইউনূস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, শুক্রবার মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ফোনালাপের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী তার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে এক বার্তায় লিখেছেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে ফোন কল এসেছিল। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
“একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।”
Received a telephone call from Professor Muhammad Yunus, @ChiefAdviserGoB. Exchanged views on the prevailing situation. Reiterated India's support for a democratic, stable, peaceful and progressive Bangladesh. He assured protection, safety and security of Hindus and all…
— Narendra Modi (@narendramodi) August 16, 2024
পরে শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ফোনালাপের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তরফে শফিকুল আলম লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
শফিকুল লিখেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন- সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করা হয়েছে এবং তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরে এসে সংখ্যালঘু সুরক্ষা বিষয়ে মাঠ থেকে প্রতিবেদন করার আহ্বান রেখেছেন।
প্রবল গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়, সেদিনই তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
এরপর সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে ৮ অগাস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
সেদিন শপথ গ্রহণের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদী।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় দুই দেশের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।
৫ অগাস্ট থেকে ১৫ অগাস্ট- এই ১০ দিনে বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নির্মমভাবে খুন হওয়ার শোকাবহ ১৫ অগাস্ট ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়নি, বাতিল করা হয় সাধারণ ছুটিও।
তবে এর মধ্যে দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিতে ভারত সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন। তবে দিল্লির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা হয়। আলোচনা হয় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে। বিশেষ করে ভারতকে রেল কানেক্টিভিটি দেওয়ার সিদ্ধান্তে দেশের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উভয় দেশই ‘অনন্য ও নতুন উচ্চতার’ বলে বর্ণনা করেছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতাদের সখ্য ছিল।
দিল্লিতে অবস্থান করা শেখ হাসিনা ভারতেই স্থায়ী আশ্রয় পাবেন নাকি অন্য কোনো দেশে যাবেন, তা নিয়ে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ঘুরে ফিরেই আসছে।
ভারতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতিকে ভালো চোখে দেখছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বুধবার ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। শেখ হাসিনার নানা বক্তব্য ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘অতিরঞ্জিত’ খবরের বিষয়ে প্রণয় ভার্মার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে বিষয়ে প্রতিকার চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিবৃতির বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ভারত থেকে আসা এ ধরনের বিবৃতি ভালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।”
তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ, বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনারের সাক্ষাতের দুদিনের মাথায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করলেন।
প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ১৫ অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় নেতা এবং ভারতীয় জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে তথ্য দিয়ে দিয়েছেন প্রেস সেক্রেটারি। তিনি আরও লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদী বলেছেন- অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে এবং তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করেন তখন প্রধান উপদেষ্টা তাকে বলেন, তার সরকার সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করা হয়েছে এবং তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরে এসে সংখ্যালঘু সুরক্ষা বিষয়ে মাঠ থেকে প্রতিবেদন করার আহ্বান রেখেছেন।
“বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং সারা দেশে জীবন স্বাভাবিক হচ্ছে,” নরেন্দ্র মোদীকে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ১৭ অগাস্ট নয়াদিল্লির ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন তিনি।
মোদীকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ফলে তার অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব। তার সরকার ছাত্র ও জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী করতে এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।