“সমস্যা হচ্ছে, এসব বিষয়ের আলোচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রাজনীতি ঢুকে পড়ে ", বলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্ত বসু।
Published : 28 Jan 2025, 12:12 AM
তিস্তার পানি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘সমানভাবে’ বণ্টন হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক জয়ন্ত বসু।
সোমবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় '১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে'র সমাপনী অধিবেশনে তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে 'ফিফটি-ফিফটি' বা 'সিক্সটি-ফরটি' হতে পারে। সেটা নির্ধারণ হতে পারে দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে।”
'হাইড্রো ডিপ্লোমেসি এবং ওশান ফিউচার' স্লোগানে অ্যাকশন এইডের এই সম্মেলনে গুরুত্ব পায় বাংলাদেশের অংশীদারত্ব থাকা বিভিন্ন নদীর ‘ন্যায্য হিস্যার’ বিষয়টি।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানির সমান বণ্টন কীভাবে সম্ভব, এমন প্রশ্নে জয়ন্ত বসুর ভাষ্য, "এটি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের আলোচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রাজনীতি ঢুকে পড়ে।
"সেক্ষেত্রে প্রমাণভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত তাদের সম্পর্ক ঠিক করতে পারে। তিস্তায় সমাধান হিসেবে অনুসরণ করা যেতে পারে আন্তঃসীমানা ও ট্রান্স বাউন্ডারি ডিসকোর্স।"
তিনি বলেন, "নদী সংকট মানুষ তৈরি করছে। নদীকে নর্দমা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা কলকাতায় হচ্ছে, ঢাকা, করাচি, কলম্বো সবখানেই হচ্ছে। এটি এখনই থামানো উচিত।"
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমানা থাকা নদীর ডকুমেন্টশনেও জোর দেন এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, "সিকিমে বাঁধের ফলে পানি নিচে আসতে পারছে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সঠিক 'ডেটা' থাকা উচিৎ। যথাযথ তথ্য না থাকায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন কাজ করতে পারছে না।”
রোববার সম্মেলন শুরুর দিন ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ’, ‘পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা হয়।
সেখানে উঠে আসে নানা সংকট এবং করনীয়। বক্তারা বলেন, দেশের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর নাব্যতা এবং প্রবাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে নদীর উৎস দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রয়োজনে ভারতের পাশাপাশি চীন এবং নেপালকেও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলে মত দেন কেউ কেউ।
সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে টেকসই, জলবায়ু সহনশীল, বিশুদ্ধ পানির উৎস এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বিনিয়ো বাড়ানোয় অগ্রাধিকারের আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং পানি পরিশোধন ব্যবস্থায় এসব বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
স্কুল থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্যবিধি, পানিবাহিত রোগ, প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং টেকসই অনুশীলনে জোর দেওয়ার কথাও বলেন আলোচকরা।
পানি জাদুঘর জনপ্রিয়করণ এবং আরও বেশি জনসম্পৃক্তকরণেও জোর দেওয়া হয় সম্মেলনে।
দেশের পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
এবার সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পানি, নদী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ের উদ্ভাবনীমূলক সমাধান চিহ্নিত ও প্রচার করা, টেকসই এবং সহনশীলনতায় অগ্রসর হওয়া এবং পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ন্যায়সংগত ও ন্যায্যতার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা।